জামালপুরে শিশুবিয়ে বন্ধে নতুন প্রকল্পের যাত্রা শুরু

শিশু বিয়ে বন্ধে নতুন প্রকল্পের অবহিতকরণ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

জাহাঙ্গীর সেলিম॥
শিশুবিয়ে মুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এক্সিলেরেটিং অ্যাকশন টু ইন্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ নামে নতুন এক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে জামালপুরে। এ উপলক্ষে ১ অক্টোবর জামালপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

কর্মশালায় অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান মাহমুদ আলী, অতিরিক্ত জেলা হাকিম রাজিব কুমার সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মছিরন নেছা, ইউএনএফপিএ এর জাতীয় প্রকল্প কর্মকর্তা হুমায়রা ফারহানাজ প্রমুখ।

কর্মশালা সূত্রে জানা যায়, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের সহায়তায় ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এক্সিলেরেটিং অ্যাকশন টু ইন্ড চাইল্ড ম্যারিজ ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের কার্যক্রম জামালপুর এবং বগুড়া জেলায় পরিচালিত হবে। এ প্রকল্পরে আওতায় জামালপুর জেলার জামালপুর সদর, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ এবং সরিষাবাড়ী উপজেলাগুলো কর্ম এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্ম এলাকার ২২টি ইউনিয়নে প্রাথমিকভাবে ২২টি কিশোরী রিসোর্স সেন্টার গঠন করা হবে। প্রতিটি সেন্টারে ১০-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীদের সমন্বয়ে কিশোরী রিসোর্স সেন্টার গঠন করা হবে। রিসোর্স সেন্টারগুলো হবে একটি নিরাপদ স্থান, যা কিশোরীদের জীবন ও পেশাদারী দক্ষতার বিকাশ এবং সামাজিক সমর্থন জোরদার করবে। মনে করা হচ্ছে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরী মেয়েরা তাদের পছন্দের প্রকাশ এবং পছন্দগুলো অনুশীলনে সক্ষম হবে এর মাধ্যমে।

কিশোরী রিসোর্স সেন্টারে কার্যক্রম সমন্বয় এবং কিশোরী রিসোর্স সেন্টারগুলোতে জীবন ও জীবিকা দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (এএসআরএইচআর) বিষয়ে শিক্ষা প্রদানের জন্য জেন্ডার প্রোমোটার নিয়োগ করা হবে এবং জেন্ডার প্রোমোটারদের উক্ত বিষয় সমূহে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে পপুলেশন কাউন্সিল প্রকল্প পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্প কর্মীদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য কারিগরী সহায়তা প্রদান করবে।

এ ছাড়াও উদ্ভাবনী আইসিটি যোগাযোগের মাধ্যম – থিয়েটার, লোক গান, ভিডিও ক্লিপ, শাহানা উপকরণ ইত্যাদির ব্যবহার করে বাবা-মা, বিশেষ করে কিশোরীদের মায়েদের সাথে কমিউনিটি অ্যাডভোকেসি মিটিং পরচিালনা করা হবে। লক্ষভূক্ত উপজেলা সমূহে বিয়ের বয়স বৃদ্ধির গুরুত্ব জোরদার করার জন্য গেটে রক্ষীদের, স্থানীয় পর্যায়ে জনসাধারণের প্রতিনিধি, র্ধমীয় নেতৃবৃন্দ, বিয়ের নিবন্ধক, বাবা-মা, শ্বশুরসহ কমিউনিটি ভিত্তিক সংলাপ পরিচালনা করা হবে।

পাশাপাশি, ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি স্থাপন করা হবে। আর যেখানে এ কমিটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান, সেখানে এ কমিটি সক্রিয় করতে সহায়তা প্রদান করবে এই প্রকল্প। সেইসাথে প্রতিটি বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে যথাযথ প্রশিক্ষণের।

মনে করা হচ্ছে, এ প্রকল্পের ফলে কিশোরী মেয়েদের সহায়তায় তাদের পরিবার ইতিবাচক মনোভাব ও আচরণ প্রদর্শন করবে এবং কিশোরীদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে জাতীয় আইন, নীতি কাঠামো ও প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সাথে সঙ্গতপূর্ণ এবং যথোপযুক্ত করতে সহায়ক হবে এ প্রকল্প।