বামুনপাড়ায় রাস্তার ওপর ঝুলছে ১১ হাজার ভোল্টেজের সচল তার, নিরব পিডিবি!

বামুনপাড়া চার রাস্তার মোড়ের কাছে এভাবেই ঝুলে আছে পিডিবির ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুতের সচল তার। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে বামুনপাড়া-পুলিশ লাইন্স-বেলটিয়া রাস্তায় পিডিবির বিদ্যুতের খুঁটি হেলে সেতু ও রাস্তার ওপর ঝুলছে ১১ হাজার ভোল্টেজ ও ৪৪০ ভোল্টেজের সচল তার। ঝুলন্ত সচল তারে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে বিদ্যুৎ চলে যাওয়াসহ মারাত্মক দুর্ঘটনার আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্থানীয় বিভিন্ন কলকারখানা, পোল্ট্রি খামার মালিক ও সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্থানীয়দের আবেদনেও পিডিবি কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছেন না। তবে জরুরি ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন জামালপুর পিডিবির একজন সহকারী প্রকৌশলী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বামুনপাড়া চার রাস্তা মোড় হয়ে পাকা রাস্তাটি গেছে পুলিশ লাইন্স হয়ে বেলটিয়া মোড়ে। ব্যস্ততম এই রাস্তায় দিন-রাত চলাচল করে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য যানবাহন। এই রাস্তার পাশ দিয়ে প্রতিটি খুঁটিতে রয়েছে ওপরে ১১ হাজার ভোল্টেজ, নিচে ৪৪০ ভোল্টেজের পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। এই রাস্তার বামুনপাড়া চার রাস্তা মোড়ের কাছে রাস্তার বাঁকে এবং গবাখালের সেতুর ওপরে পিডিবির বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি হেলে বৈদ্যুতিক সচল তার ঝুলে পড়েছে। এর মধ্যে সবচে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বামুনপাড়া চার রাস্তা মোড়ের কাছের রাস্তার বাঁকে। সেখানে একটি স্টিলের খুঁটি হেলে গেছে। ফলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সচল তার রাস্তার ওপর ঝুলে থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এই রাস্তায় অটোরিকশা বা বাইসাইকেল চালক ও পথচারীরাও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। ইতিমধ্যে সেখানে পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপের সাথে ঝুলন্ত তারের সংঘর্ষে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে একাধিকবার। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বামুনপাড়া ও পুলিশ লাইন্স এলাকায় পুলিশ লাইন্স প্রতিষ্ঠান, একটি অটোমেটিক রাইস মিল ও একটি পেপার মিল, বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি খামার মালিকসহ কয়েক হাজার সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। হেলে পড়া খুঁটিগুলো যেকোনো মুহূর্তে একেবারেই সচল তারসহ মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় অটোরাইস মিল মালিক ও পেপার মিল মালিকসহ সাধারণ গ্রাহকরা পিডিবির কাছে লিখিতভাবে এ বিষয়ে আবেদন করেও কোন সাড়া পাননি।

পুলিশ লাইন্স সেতুর ওপর এভাবেই ঝুলে আছে পিডিবির ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুতের সচল তার। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

হেলে পড়া বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশের বাড়ির মালিক কৃষক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, এইখানে তো মেলা সমস্যা। গাড়ি বাইজা পইড়া বাড়ির কারেন্ট যায় গা। এই এলাকা আন্ধার হয়া যায়। আগুন ছিটা পড়ে। বিদ্যুৎ অফিসে জানাইলেও সময় মতো আসে না। আইলেও খুঁটি সোজা করে না। খালি তার লাগাই দিয়া চইলা যায়। আবার কয়দিন পরেই একই সমস্যা হয়।

স্থানীয় আঞ্চলিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হাসান আবু বলেন, একজন মানুষ ঝুলন্ত তারের নিচে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে হাত তুললেই প্রায় তারের স্পর্শ লাগার পরিস্থিতি হয়। ট্রাক বা যেকোন গাড়ি বিদ্যুতের তারের সাথে স্পর্শ লেগে বিকট শব্দে ফায়ার করে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। রাতের বেলা এই সমস্যা বেশি হয়। পিডিবিতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু হেলে পড়া খুঁটি সোজা করা বা এখানে সিমেন্টের বড় খুঁটি বসায়ে তার উঁচু করে দিচ্ছে না পিডিবি।

স্থানীয় রত্না অটো রাইস মিল মালিক আশরাফ আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, বামুনপাড়া চার রাস্তার মোড়ের কাছে এবং পুলিশ লাইনের পর গবাখালের সেতুর ওপর হেলে থাকা পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি ও রাস্তার ওপর ঝুলন্ত তার উঁচু করে দেওয়ার জন্য পিডিবি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বারবার জানানোর পরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা রোধে পিডিবি কেন যে কর্ণপাত করছে না, তা বুঝতে পারছি না।

বামুনপাড়ায় বিদ্যুতের সচল তার ঝুলে থাকা প্রসঙ্গে জামালপুর পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, বামুনপাড়া চার রাস্তা মোড় এলাকায় ও গবাখালের সেতু এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার উঁচু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।