ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা প্রাপ্ত হালিমার দু’টি কথা

বন্যা পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেওয়ানগঞ্জের হালিমা বেগম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

‘মোগরে ব্র্যাক থন আবারও দুই হাজার টাকা দেলেন, হামরা অহন ছেলে-পুলে নিয়ে খেয়েপরে জান বাঁচাতে পারুম’। এসব কথা বললেন, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাঘারচর বেপারীপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা বেগম। বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ততার ঘর-বাড়ি, সে ব্র্যাক থেকে সর্বশেষ মানবিক সহায়তা হিসেবে দুই হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পান। হালিমার স্বামী একজন দিনমজুর। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার।

হালিমা বলেন, আমার স্বামী যা উপার্জন করত তা দিয়ে হামরা কোনরকমে খেয়েপরে দিন পার করছিলাম, এরই মধ্যে সারা দুনিয়া জুরে মহামারিরূপে আসল করোনাভাইরাস। যা হামাদের জীবনের গতিকে থামিয়ে দিল, সরকার সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে লকডাউন ঘোষণা দিল। স্বামীর কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেল। আয় রোজগারনাই। ছেলে-পুলে নিয়ে কি খাই? কিভাবে বাঁচি? এমন সময় ব্র্যাক থেকে প্রথম বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার ৫০০ টাকা পাই। যা পেয়ে আমি কি যে খুশি হয়েছিলাম তা বলার ভাষা হামার নাই। টাকা পেয়ে সাথে সাথে আমি স্বামীকে দিয়ে চাল, ডাল, নুন, তেল, মাছ ও তরি-তরকারি কিনে আনি। যা দিয়ে আমি ছেলে-পুলে নিয়ে খেয়েপরে ১৮ দিন পার করি।

এরই মধ্যে আবার শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ বন্যা। উঠানে পানি, থাকার ঘরে পানি, ল্যাট্রিন ডুবে গেছে, রান্নাঘরে পানি চতুর্দিকে শুধু পানি আর পানি। কোথায় থাকবো, কোথায় রান্না করবো, কোথায় ল্যাট্রিন ব্যবহার করবো? ঘরে নিজেদের খাবার নাই, গরুর খাবার নাই, ঘরের বেড়া, ল্যাট্রিনের বেড়া ভেঙ্গে গেছে, সে কি যে কষ্ট সেটা বলে বুঝাতে পারমুনা। এই কষ্ট ও বিপদের সময় ব্র্যাক আবারও বন্যায় মানবিক সহায়তা হিসেবে দুই হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেয়। এই টাকা পেয়ে প্রথমে চাল, ডাল, নুন, তেল ও তরি-তরকারি কিনে এনে রান্না করে ছেলে-পুলে সবাই মিলে খাই। তারপর ঘরের বেড়া ও ল্যাট্রিনের বেড়া মেরামত করি, ৫ কেজি সিমেন্ট এনে নলকূপের গোড়া পাকা করি। ৩০০ টাকার গরুর খাবার কিনি। বাকি টাকায় আমাদের আরও কয়েক দিন চলবে। এ দুঃসময়ে আমাদের পাশে কেউ ছিল না। আমরা সব সময় বিপদে ব্র্যাককে পাশে পেয়েছি। ব্র্যাকের কথা আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে। এজন্য ব্র্যাককে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।

ব্র্যাকের জামালপুর জেলা সমন্বয়ক মো. মুনীর হুসাইন খান জানান, ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়া ও সুনামগঞ্জ জেলার ৫০ হাজার অতিদরিদ্র বন্যাদুর্গত প্রতিটি পরিবারকে দুই হাজার টাকা করে মোট দশ কোটি টাকা নগদ আর্থিক মানবিক সহায়তা বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

জামালপুর জেলার তিনটি উপজেলায় দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জে এ মোট হাজার ৯১৩টি পরিবারকে দুই হাজার টাকা (পরিবারপ্রতি) করে মোট দুই কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রতিটি উপকারভোগীর বাড়িবাড়ি যেয়ে নিড অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করা হয়। অধিক বিপদাপন্ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নারীপ্রধান পরিবার, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা, অপুষ্টিজনিত শিশু, অসুস্থ, বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী আছে এমন অতিদরিদ্র পরিবার যারা এখনও কোন ত্রাণসহায়তা পায়নি তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করে বিকাশের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। এ মানবিক সহায়তার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জামালপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন জেলা ব্র্যাক সমন্বয়ক মো. মুনীর হুসাইন খান।