সরিষাবাড়ীতে ফের তৃতীয় দফা বন্যা, চরম দুর্ভোগে বানভাসি মানুষ

পৌরসভার কামরাবাদ এলাকায় বাড়ি ঘরে পানি উঠায় বাউসি সংলগ্ন রেল লাইনের উপর গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় যমুনা নদীর পানি তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে গত ২৪ ঘন্টায় বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আবারও চরাঞ্চলসহ পৌর এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ। বাড়ি- ঘরে পানি উঠায় বেশি বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে রেল লাইনের উপর ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির ও খাদ্যের তীব্র সংকট।

২৪ জুলাই ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় দফা বন্যা যেতে না যেতেই যমুনা নদীর পানি তৃতীয় দফা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পিংনা, আওনা, পৌগলদিঘা, সাতপোয়া, ভাটারা, কামরাবাদ এলাকাগুলোতে বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট। এদিকে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে। বাড়ি ঘরে পানি থাকায় অনেক মানুষ গবাদি পশুসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও রেল লাইনে মাথা গুজার একটু ঠাঁই করে নিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজিত হওয়ায় ৯ হাজার ৬৪০ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ভেঙে গেছে নদী রক্ষা বাঁধ, সেতু, কালভাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো পৌঁছেনি সরকারি কোন সহায়তা।

পৌর এলাকার জরিনা বেগম জানান, ঘরে পানি উঠায় ৫ মেয়ে ৩ ছেলে নিয়ে রেল লাইনের উপরে আশ্রয় নিয়েছি। পলিথিন দিয়ে চাল বানিয়ে সেখানে থাকি। বৃষ্টি শুরু হলেই মাটিতে পড়ার আগে শরীরে পড়ে। সন্তানদের কাঁথা দিয়ে ডেকে রাখি তাও রক্ষা করতে পারছিনা। বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। নিজেও ভালো নেই। এখানে এসে কিছু মুড়ি চিড়া পেয়ে ছিলাম আর কেউ কিছু দিতে আসে নাই। খাবার জন্য বাঁচ্চা কান্না করে খাবার দিতে পারি না। এতো কষ্ট আর ভালো লাগে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৭০ কোটি টাকার মতো কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। এখন আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা পানি এভাবে বৃদ্ধি পেলে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারিভাবে সহায়তা যা পেয়েছি নৌকা দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।