করোনাভাইরাস: শেরপুরে পনেরো হাজার চালক ও হেলপারের আয়ের পথ বন্ধ

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শফিকুল ইসলাম সেজু। বয়স ২২ বছর। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হালচাটি গ্রামে। মা, ছোট ভাই, স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হয় তাকে। সেই কাকডাকা ভোরে বের হন গাড়ি নিয়ে। ঘরে ফেরেন রাতে। সব খরচ বাদে দিনে আয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ওই টাকায় সংসার চলতো তার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করা আছে। তাই তার আয়ও বন্ধ। শফিকুল জানান, এখন কর্মহীন হয়ে ধার দেনা করে তাকে সংসার চালাতে হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেরপুরের সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর প্রায় পনেরো হাজার চালক ও হেলপারের আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। এরা সবাই বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ট্রলি চালক।

সদর উপজেলার ঢাকলহাটি ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকার ট্রাক চালক মজনু মিয়া বলেন, দিন কামাই করে, দিন খাই। গাড়ি বন্ধ থাকায় চোখে আন্ধার দেখতাছি। সংসার চালাবার পারতাছি না। করোনা আইসা আমাগো আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক জহুরুল বলেন, কয়দিন গাড়ি চালাবার পাই না। ক্যামনে যে চলমু, কিছু বুঝতাছি না।

ঝিনাইগাতী অটোটেম্পু-অটোরিকশা চালক সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রজব বলেন, গত সাতদিন ধরে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চালক ও হেলপারদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, জেলার প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক এখন কর্মহীন। এ কারণে অনেকের পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছে।

ট্রলি চালক সংগঠনের নেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, এ গাড়ির চালকরা, গাড়ি চালিয়েই সংসার চালান। গাড়ি বন্ধ থাকায় তাদের চলতে কষ্টে হচ্ছে।

ট্রাক, মিনিট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুহু মিয়া বলেন, দেশে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের গাড়িও বন্ধ রয়েছে। ফলে চালক ও শ্রমিকদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে। এখন অভাব অনটনে চলছে সংসার।

শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা বাসচালক মিষ্টার আলী বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবারই আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। এতে অনেকের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

একেবারে দরিদ্র চালক ও হেলপারদের তালিকা পেলে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ।