বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক : মন্ত্রিসভা ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় হজ ও ওমরাহ্ নীতি-২০১৯ এবং হজ প্যাকেজ-২০১৯ অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের বিভাগের সচিব মো. শফিউল আলম বাংলাদেশ সচিবালয়ে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ যাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করবেন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করবেন। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ অবশ্যই ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে।
দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠানো হবে। প্রথম প্যাকেজে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে বিমান টিকেটসহ ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
হজযাত্রীদের মধ্যে যারা ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা নিতে আগ্রহী তা তাদেরকে অতিরিক্ত ২৪,৯৮১ টাকা দিতে হবে, তবে বাকীদের ১৯,০২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।
প্রতিটি বেসরকারি হজ এজেন্সি চলতি বছর কমপক্ষে ১৫০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। এবারের হজের সম্ভাব্য তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৯। তবে, তা নির্ভর করবে চাঁদ দেখার ওপর।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই প্যাকেজের আওতায় একটি ফ্লাইটে তিনটির বেশি এজেন্সির যাত্রী পাঠাতে পারবে না। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-এর মাধ্যমে কুরবানীর খরচ পাঠাতে হবে। চলতি বছর সৌদি সরকার কুরবানির জন্য ৫২৫ রিয়াল নির্ধারণ করেছে, গত বছর কুরবানীর নির্ধারিত খরচ ছিল ৪৭৫ রিয়াল, প্রত্যেক হজযাত্রীকে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৬৮ রিয়াল ব্যাংক ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে প্রদান করতে হবে।
যে সব মুসলমান দু’বারের বেশি হজ পালন করেছে বা ভিসা পাওয়ার পরও হজে যেতে পারেনি তাদেরকে অবশ্যই ২,১০০ রিয়াল সৌদি সরকারকে জরিমানা দিতে হবে।
সচিব বলেন, ২০১৯ সালের হজ ও উমরাহ নীতিমালা অনুসারে হজযাত্রীদের তাদের জন্মদিন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখাতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়, সকল উমরাহ হজ পালনকারীকে রেজিস্ট্রেশন করার আগে উমরাহ এজেন্সিগুলো তাদের পৌঁছানো এবং ফেরার দিন সংক্রান্ত তথ্য সরকারকে জামা দিতে হবে। প্রতি ৪৪ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে মোয়াল্লেম থাকবে। ইতোপূর্বে ৪৫ জনের জন্য একজন মোয়াল্লেম প্রেরণ করা হতো।
নতুন নীতিমালায়, সকল হজ এজেন্সি রমজানের আগেই হজযাত্রীদের বাসস্থান চুক্তির কপি প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। নীতিমালায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হজযাত্রীদের সেবাদানের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছ্বাসেবী নিয়োগের দায়িত্ব প্রদান করেছে।
হজযাত্রীদের বিমান ও বাস ভাড়া বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনের নামে পে অর্ডারের মাধ্যমে দিতে হবে।
নতুন নীতিমালা অনুসারে, রেজিস্ট্রেশনকৃত কোনো হজযাত্রীর নাম তাকে না জানিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। হজযাত্রীকে হজ পালনের জন্যে শারিরীক, অর্থনৈতিক সেই সঙ্গে মানসিকভাবে সক্ষম হতে হবে। নীতিমালা বলা হয়, হজ পালনে ইচ্ছুক সকলকে তাদের বাসা বাড়া, সার্ভিস চার্জ ও ক্যাটারিং অনলাইনের খরচ প্রদান করতে হবে।
নীতিমালা অনুসারে হজের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ অথবা সৌদী অরবের কাউকে মোয়াল্লেম নিযুক্ত করবে এবং হজ শুরুর দু’মাস আগেই এই নিয়োগ দিতে হবে। মোয়াল্লেমকে অবশ্যই আরবী ভাষায় পারদর্শী হতে হবে এবং তাদের পরিচয়পত্র ডেপুটি কমিশনারকে দিয়ে যাচাইকৃত হতে হবে।
মন্ত্রিসভা ‘প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। নিষ্ঠুরতার পরিবর্তে প্রাণীর মালিকদের ইতিবাচক ও সদয় আচরণ প্রদর্শন করতে পূর্ববর্তী প্রাণী আইন-১৯২০-এর স্থলে এই আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আইনের মাধ্যমে কোনো প্রাণীকে বিষ প্রয়োগে অপ্রয়োজনীয় হত্যা বা ২৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখা রোধ করা যাবে। যদি কেউ এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয় তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধর্মীয় আচার অনুযায়ী প্রাণী হত্যা ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে।
মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি প্রাকটিশর্নাস অর্ডিনেন্স-১৯৮২’ পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল এ্যাক্ট-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে। এই আইনের অধীনে প্রাণীসম্পদ বিভাগ, মাদক সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, এটর্নি জেনারেল অফিস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ ২২ সদস্যের ভেটেরিনারি কাউন্সিল গঠন করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৭-সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। এতে স্পিকার কর্তৃক মনোনিত একজন এমপি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ৪ জন নিবন্ধিত পশু চিকিৎসক নিযুক্ত করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পশু চিকিৎসকদের নৈতিকতা সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান ও প্রতি ৪ বছর পরপর রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন করতে বলেন। লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তিকে ৩ বছরের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
মন্ত্রিসভা জনপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন-২০১৯ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড এয়ারোস্পেস ইউনিভার্সিটি এক্ট-২০১৯ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সংসদে আইনটি পাসের পথ উন্মুক্ত হলো।
সূত্র : বাসস