বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের সুখ স্মৃতি নিয়েই ৯ ডিসেম্বর থেকে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে দেশের মাটিতে ও সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ এবং চলতি সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে টাইগারদের। তাই এমন সুখস্মৃতি নিয়ে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে মাশরাফির দল। পাশাপাশি ওয়ানডে সিরিজে দলের দুই সেরা তারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে বাংলাদেশের। তাই সুখস্মৃতি নিয়ে আরও একটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর একটায় শুরু হবে প্রথম ওয়ানডে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসের সাথেই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। প্রথমমত, ২০১২ সালে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিলো টাইগাররা। পাঁচ ম্যাচের ঐ সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজটি জিতেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ (ঐ সফরে দু’টি টেস্ট ও তিনটি টি-২০ও ছিলো) খেলে টাইগাররা। সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতে মাশরাফির দল।
তৃতীয়ত, চলতি সফরে টেস্ট ফরম্যাটের দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইওয়াশ করেছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটি। একচেটিয়া পারফরমেন্স করে দু’টি টেস্টই জিতে নেয় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে এবং ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয় পায় টাইগাররা।
কাল থেকে শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাসী থাকার আরও বড় কারন আছে বাংলাদেশের। এই সিরিজ দিয়ে আবারো ওয়ানডেতে ফিরছেন দলের দুই সেরা তারকা সাকিব-তামিম। এশিয়া কাপ চলাকালীন ইনজুরিতে পড়েছিলেন তারা। তারপরও এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো বাংলাদেশ।
তবে ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ব্যাট-বল হাতে উজ্জল ছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে ১১৫ রান ও বল হাতে ৯ উইকেট শিকার করেন সাকিব। ফলে সিরিজ সেরাও হন তিনি। অবশ্য টেস্ট সিরিজের আগে নিজের খেলা নিয়ে নিজেই শংকায় ছিলেন সাকিব। কোচ স্টিভ রোডসের উৎসাহে ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। নেমেই বাজিমাত করেন টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।
সাকিবের চিন্তা দূর হবার পর তামিমকে চিন্তিত ছিলো বাংলাদেশ। বন্ধুর মত বাংলাদেশের চিন্তা মুছে দেন তামিমও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজের ফিটনেসের প্রমান দেন তামিম। ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৩ বলে ১০৭ রান করেন তামিম। এছাড়া ঐ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন সৌম্য সরকারও। আলো স্বল্পতার কারনে ডিএল মেথডে ৫১ রানে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
আত্মবিশ্বাসে টগবগ হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে সর্তক বাংলাদেশ। সিরিজটি বেশ প্রতিন্দ্বন্দিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও কোচ স্টিভ রোডস। কিছুদিন আগে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘ফরম্যাট যত ছোট হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তত ভালো দল।’
এদিকে প্রস্তুতি ম্যাচের পর রোডস বলেন, ‘সিরিজের তিনটি ম্যাচই কঠিন হবে। জিততে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমীহ করছি। টেস্ট সিরিজ হেরেছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারের পর আমরা ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। ক্যারিবীয়রাও একই কাজ করতে মুখিয়ে আছে। ওয়ানডে সিরিজ জিতে বদলা নিতে চাইবে তারা। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
চলতি বছর ওয়ানডে ফরম্যাটটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ‘অপয়া’। কারন বছরের শুরুতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সেরার মুকুট পড়তে পারেনি তারা। বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার ছাড়পত্র পেলেও ফাইনালে আফগানিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হার মানে ক্যারিবীয়রা।
এরপর দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে আথিয়েতা দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত সফরে গিয়ে নিজের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতে ‘অপয়া’ শব্দটি মুছে ফেলতে বদ্ধ পরিকর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দিবেন রোভম্যান পাওয়েল। নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ইনজুরির কারনে বাংলাদেশ সফরে আসেননি। তাই টেস্ট সিরিজে অনিয়মিত অধিনায়কের অধীনে খেলেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ফরম্যাটে ক্যারিবীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওপেনার ক্রেইগ ব্রাফেট।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ মিথুন, সাইফ উদ্দিন, আবু হায়দার ও আরিফুল হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল : রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন ব্রাভো, রোস্টন চেজ, শাই হোপ, দেবেন্দ্র বিশু, চন্দরপল হেমরাজ, শিমরন হেটমায়ার, কেমো পল, কাইরন পাওয়েল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, কার্লোস ব্রাফেট, কেমার রোচ, সুনীল অ্যামব্রিস ও ওশানে টমাস।
সূত্র : বাসস