বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর সরকার নির্বাচনে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।
২ নভেম্বর রাতে গণভবনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। বরং নির্বাচন কমিশন যদি চায় তাহলে সহযোগিতা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ড. কামাল হোসেনকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর চিঠির উত্তরে একটা বিষয় লেখা ছিল-গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সম্মত সব বিষয়ে আলোচনা হবে। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া হয় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকে। তফসিল ঘোষণার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। প্রধানমন্ত্রী তাদের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যে যা বলতে চেয়েছেন, তারা তা নির্দ্বিধায় বলেছেন। একেকজন তিন-চার বার করেও বক্তব্য রেখেছেন। কেউ তাদের বাধা দেননি। নেত্রী তাদের বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। তাদের কিছু অভিযোগ ছিল, আমরা ভদ্রচিতভাবে এগুলোর জবাব দিয়েছি। আমাদের সিনিয়র নেতারাও এ সময় বক্তব্য রেখেছেন।”
তিনি বলেন, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিস্কার বলে দিয়েছেন সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোন বাধা দেয়া হবে না। তবে কেউ যেন রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ না করেন। ঢাকার ব্যাপারে বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কর্ণার করে দেয়া হবে, যেখানে ভাড়ার বিনিময়ে সবাই সমাবেশ করতে পারবেন। এই টাকাটা নেয়া হবে সমাবেশ পরবর্তী সময়ে পরিচ্ছন্নতার জন্য।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঐক্যফ্রন্টের আরেকটি দাবি ছিল বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এই প্রযুক্তির ব্যবহারকে সমর্থন করি। তবে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করবে।’
রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক মামলাগুলোর তালিকা দিন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি আদালতের বিষয়, সংলাপে এটা আসতে পারে না। যে দুটি মামলায় সাজা হয়েছে, এগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছে। আমাদের সরকার এই মামলা দেয়নি। আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা ছিল। এগুলোর প্রত্যেকটির তদন্ত হয়ে কিছু না পেয়ে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে আলোচনায় ড. কামাল হোসেন সাহেবকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ৭৩ সাল থেকে আপনিও অনেকগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। একমাত্র ২০০১ সালে ছাড়া আর কোন নির্বাচনে কি সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ছিল?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আলোচনায় বেশ কিছু অগ্রগতি রয়েছে। ড. কামাল হোসেন সাহেব আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আলোচনায় সন্তুষ্ট। এখানে এসে এমন অনেক কিছু জানতে পেরেছেন, যা আগে তিনি জানতেন না।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, আবারো ছোট পরিসরে আলোচনা করতে চাইলে যেকোন সময় তারা আসতে পারেন। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না।’
সূত্র : বাসস