ঢাকা ০২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদারগঞ্জের তিন কিশোর ভারতের কারাগারে বন্দি

মাদারগঞ্জ : ভারতের কারাগারে আটক মেহেদী হাসান, মমিনুল ইসলাম ও শাওন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ভাগ্য বদলাবে, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরবে- এমন আশায় প্রায় চার বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার তিন কিশোর। যাবেন স্বপ্নের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য দালালের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারত গিয়েছিলেন তারা। ভারত থেকে পাড়ি জমাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।

২০২১ সালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় চার বছর ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন তারা। পরিবারের দাবি, ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের লখনউ কারাগারে তাদের রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পরও তাদের ফেরত না পাওয়ায় এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্বজনেরা।

ভারতের কারাগারে বন্দি তিন কিশোর হলেন- মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল পক্ষীমারী এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (১৯), জয়নালের ছেলে মমিনুল ইসলাম (১৮) ও রেজাউল করিমের ছেলে শাওন (১৮)।

কিশোরদের স্বজনেরা জানান, ২০২১ সালের আগস্টে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল পক্ষীমারী এলাকার জাহাঙ্গীর ও মামুন নামে দুই আদম ব্যবসায়ী একই এলাকার মেহেদী, মমিনুল ও শাওনকে পাসপোর্ট ছাড়াই কম খরচে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দালালচক্রের সদস্যরা তিন কিশোরকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। পরে ভারতীয় পাসপোর্টসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর জন্য তিন কিশোরকে দিল্লী এয়ারপোর্টে নিয়ে যায় দালাল চক্রের সদস্যরা।

কিন্তু কাগজপত্র সঠিক না থাকায় তাদের দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো যায়নি। পরে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর তিন কিশোরের পরিবার ভারতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন- মেহেদী, মমিনুল ও শাওন উত্তর প্রদেশের লখনউ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ভারতীয় জাল পাসপোর্ট, তিনটি আধার কার্ড, তিনটি ভোটার কার্ড ও ১২টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর নানানভাবে চেষ্টা চালিয়েও তাদের জামিন করানো সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় ২০২২ সালে শাওনের বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে জাহাঙ্গীর, মামুনসহ চারজনের বিরুদ্ধে জামালপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০২৪ সালে ২১ মে জাহাঙ্গীর ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দু’জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত না হওয়ার তাদেরকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন।

আটক শাওনের বাবা রেজাউল করিম বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে তারা কৌশলে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যায়। তাই কোন বিচারও পাচ্ছি না।

আটক মেহেদীর বাবা সোনা মিয়া বলেন, আমরা দরিদ্র। তারপরও শেষ সম্বল বিক্রি করে ছেলেটাকে বিদেশে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দালালেরা মিথ্যা প্রলোভনে তাদের ভারতে নিয়ে গেছে। পরে তারা সেখানে আটক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও তাদের জামিন বা মুক্তি কিছুই করতে পারি নাই।

মাদারগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, মেহেদী, মমিনুল ও শাওনের মুক্তির ব্যাপারে বিজিবি, ভারতীয় দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার আবেদন ও অনুরোধ করেছি। তারপরও তাদের মুক্তি হচ্ছে না। আমি তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারগঞ্জের তিন কিশোর ভারতের কারাগারে বন্দি

আপডেট সময় ০৯:০৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভাগ্য বদলাবে, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরবে- এমন আশায় প্রায় চার বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার তিন কিশোর। যাবেন স্বপ্নের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য দালালের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে ভারত গিয়েছিলেন তারা। ভারত থেকে পাড়ি জমাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।

২০২১ সালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় চার বছর ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন তারা। পরিবারের দাবি, ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের লখনউ কারাগারে তাদের রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পরও তাদের ফেরত না পাওয়ায় এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন স্বজনেরা।

ভারতের কারাগারে বন্দি তিন কিশোর হলেন- মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল পক্ষীমারী এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (১৯), জয়নালের ছেলে মমিনুল ইসলাম (১৮) ও রেজাউল করিমের ছেলে শাওন (১৮)।

কিশোরদের স্বজনেরা জানান, ২০২১ সালের আগস্টে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল পক্ষীমারী এলাকার জাহাঙ্গীর ও মামুন নামে দুই আদম ব্যবসায়ী একই এলাকার মেহেদী, মমিনুল ও শাওনকে পাসপোর্ট ছাড়াই কম খরচে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দালালচক্রের সদস্যরা তিন কিশোরকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। পরে ভারতীয় পাসপোর্টসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর জন্য তিন কিশোরকে দিল্লী এয়ারপোর্টে নিয়ে যায় দালাল চক্রের সদস্যরা।

কিন্তু কাগজপত্র সঠিক না থাকায় তাদের দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো যায়নি। পরে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর তিন কিশোরের পরিবার ভারতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন- মেহেদী, মমিনুল ও শাওন উত্তর প্রদেশের লখনউ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ভারতীয় জাল পাসপোর্ট, তিনটি আধার কার্ড, তিনটি ভোটার কার্ড ও ১২টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর নানানভাবে চেষ্টা চালিয়েও তাদের জামিন করানো সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় ২০২২ সালে শাওনের বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে জাহাঙ্গীর, মামুনসহ চারজনের বিরুদ্ধে জামালপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০২৪ সালে ২১ মে জাহাঙ্গীর ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দু’জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত না হওয়ার তাদেরকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন।

আটক শাওনের বাবা রেজাউল করিম বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে তারা কৌশলে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যায়। তাই কোন বিচারও পাচ্ছি না।

আটক মেহেদীর বাবা সোনা মিয়া বলেন, আমরা দরিদ্র। তারপরও শেষ সম্বল বিক্রি করে ছেলেটাকে বিদেশে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দালালেরা মিথ্যা প্রলোভনে তাদের ভারতে নিয়ে গেছে। পরে তারা সেখানে আটক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও তাদের জামিন বা মুক্তি কিছুই করতে পারি নাই।

মাদারগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, মেহেদী, মমিনুল ও শাওনের মুক্তির ব্যাপারে বিজিবি, ভারতীয় দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার আবেদন ও অনুরোধ করেছি। তারপরও তাদের মুক্তি হচ্ছে না। আমি তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।