ঢাকা ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নকলায় আইয়্যুব হত্যা রহস্য উদঘাটন : ভাতিজা ও ভাড়াটে খুনি মিলে হত্যা

প্রতীকী ছবি

শেরপুরের নকলা উপজেলায় আলোচিত চাঞ্চল্যকর দর্জি আইয়্যুব আলী (৪৫) হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে নকলা থানা পুলিশ। নিহত দর্জি আইয়্যুব আলীর ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোন ও হত্যার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করায় প্রশংসিতও হয়েছেন নকলা থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- উপজেলার রুনীগাও মধ্যপাড়া এলাকার নিহত আইয়্যুব আলীর ভাতিজা মুকুল মিয়া (৪৫), কুর্শাবাদাগৌড় এলাকার স্বপন রবিদাস সেতু (২৫) ও মুকুল মিয়ার ছেলে মহসিন হাসান (২৩)। নিহতের স্ত্রী রুবী বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আইয়্যুব আলীর সাথে জমিজমা নিয়ে ভাতিজা মুকুল মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। সেই ক্ষোভে আইয়্যুব আলীকে হত্যার হুমকি দেন মুকুল মিয়া। এদিকে স্বপন রবিদাস সেতু রুনীগাও এলাকায় বিদেশ যাওয়ার জন্য জনৈক এক ব্যক্তিকে টাকা দেন। র্দীর্ঘদিন হলেও সেই টাকা তুলতে পারে না সেতু। পরে মুকুল মিয়াকে বিষয়টি জানালে সে (মুকুল) সেতুকে বলে ‘আমার একটা কাজে সহযোগিতা করলে তোমার পাওনা টাকা উদ্ধারে আমি সহযোগিতা করব’। তখন সে এই শর্তে রাজি হলে ১৪ নভেম্বর বৃস্পতিবার রাতে ঘটনার দিন আইয়্যুব আলী নকলা বাজার থেকে দর্জির কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে রুনীগাও এলাকায় পিছু নেয় সেতু। মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজেও আইয়্যুব আলীর সাথে সেতুকে যেতে দেখা যায়। এদিকে আইয়্যুব আলীর বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের দিকে পূর্ব থেকেই উৎ পেতে ছিল মুকুল মিয়া ও তার ছেলে মহসিন হাসান। আইয়্যুব আলী পুকুর পাড়ের কাছাকাছি এসে পৌছা মাত্রই সেতু পিছন থেকে ধরে মুকুল ও তার ছেলে কুপিয়ে হত্যা করে পুকুরে ফেলে চলে যায়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব স্বীকার করেন স্বপন রবিদাস সেতু।

প্রসঙ্গত, আইয়্যুব আলী নকলা বাজারে দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। প্রতিদিনের মত দুপুরের খাবার টিফিন ক্যারিয়ার করে সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে নকলায় দর্জির কাজ করতে দোকানে যান। ১৪ নভেম্বর বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল। তাই পরিবারের সবাই চিন্তায় পরে যায় এবং বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে রাত অনুমান ১০টার দিকে কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে এসেছেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এখনও আইয়্যুব আলী বাড়ি আসেনি।

সবাই মিলে খুঁজতে বের হওয়ার সময় বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে দেখে আইয়্যুব আলীর জুতা ও বাজারের ব্যাগ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। জুতা আনতে গিয়ে দেখে মাটিতে অনেক রক্ত। আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখে একটি মরদেহের পায়ের অংশ পুকুরের পাড়ে পা ও মাথার অংশ পানিতে ডুবে আছে। সবাই গিয়ে ধরাধরি করে তুলে দেখে আইয়্যুব আলীর গলাকাটা মরদেহ।

পরে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলেকে আটক করে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে স্বপন রবিদাস সেতুকে গ্রেপ্তার করলে সেতু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন।

নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আইয়্যুব আলী হত্যাকাণ্ডটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করি। হত্যার সংবাদ পেয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলে আটক করি। পরে গোপনে ছায়া তদন্ত শুরু করি। তখন বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপন রবিদাস সেতুকে গ্রেপ্তার করি। সেতুর দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যার সরঞ্জামাদি ও নিহত আইয়্যুব আলীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাসেম বিজ্ঞ আদালতে গ্রেপ্তার আসামি মুকুল মিয়া ও তার পুত্র মহসিন হাসানের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

নকলায় আইয়্যুব হত্যা রহস্য উদঘাটন : ভাতিজা ও ভাড়াটে খুনি মিলে হত্যা

আপডেট সময় ০৪:৫৬:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

শেরপুরের নকলা উপজেলায় আলোচিত চাঞ্চল্যকর দর্জি আইয়্যুব আলী (৪৫) হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে নকলা থানা পুলিশ। নিহত দর্জি আইয়্যুব আলীর ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোন ও হত্যার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করায় প্রশংসিতও হয়েছেন নকলা থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- উপজেলার রুনীগাও মধ্যপাড়া এলাকার নিহত আইয়্যুব আলীর ভাতিজা মুকুল মিয়া (৪৫), কুর্শাবাদাগৌড় এলাকার স্বপন রবিদাস সেতু (২৫) ও মুকুল মিয়ার ছেলে মহসিন হাসান (২৩)। নিহতের স্ত্রী রুবী বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আইয়্যুব আলীর সাথে জমিজমা নিয়ে ভাতিজা মুকুল মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। সেই ক্ষোভে আইয়্যুব আলীকে হত্যার হুমকি দেন মুকুল মিয়া। এদিকে স্বপন রবিদাস সেতু রুনীগাও এলাকায় বিদেশ যাওয়ার জন্য জনৈক এক ব্যক্তিকে টাকা দেন। র্দীর্ঘদিন হলেও সেই টাকা তুলতে পারে না সেতু। পরে মুকুল মিয়াকে বিষয়টি জানালে সে (মুকুল) সেতুকে বলে ‘আমার একটা কাজে সহযোগিতা করলে তোমার পাওনা টাকা উদ্ধারে আমি সহযোগিতা করব’। তখন সে এই শর্তে রাজি হলে ১৪ নভেম্বর বৃস্পতিবার রাতে ঘটনার দিন আইয়্যুব আলী নকলা বাজার থেকে দর্জির কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে রুনীগাও এলাকায় পিছু নেয় সেতু। মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজেও আইয়্যুব আলীর সাথে সেতুকে যেতে দেখা যায়। এদিকে আইয়্যুব আলীর বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের দিকে পূর্ব থেকেই উৎ পেতে ছিল মুকুল মিয়া ও তার ছেলে মহসিন হাসান। আইয়্যুব আলী পুকুর পাড়ের কাছাকাছি এসে পৌছা মাত্রই সেতু পিছন থেকে ধরে মুকুল ও তার ছেলে কুপিয়ে হত্যা করে পুকুরে ফেলে চলে যায়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব স্বীকার করেন স্বপন রবিদাস সেতু।

প্রসঙ্গত, আইয়্যুব আলী নকলা বাজারে দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। প্রতিদিনের মত দুপুরের খাবার টিফিন ক্যারিয়ার করে সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে নকলায় দর্জির কাজ করতে দোকানে যান। ১৪ নভেম্বর বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল। তাই পরিবারের সবাই চিন্তায় পরে যায় এবং বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে রাত অনুমান ১০টার দিকে কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে এসেছেন। কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এখনও আইয়্যুব আলী বাড়ি আসেনি।

সবাই মিলে খুঁজতে বের হওয়ার সময় বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে দেখে আইয়্যুব আলীর জুতা ও বাজারের ব্যাগ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। জুতা আনতে গিয়ে দেখে মাটিতে অনেক রক্ত। আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখে একটি মরদেহের পায়ের অংশ পুকুরের পাড়ে পা ও মাথার অংশ পানিতে ডুবে আছে। সবাই গিয়ে ধরাধরি করে তুলে দেখে আইয়্যুব আলীর গলাকাটা মরদেহ।

পরে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলেকে আটক করে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে স্বপন রবিদাস সেতুকে গ্রেপ্তার করলে সেতু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন।

নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আইয়্যুব আলী হত্যাকাণ্ডটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করি। হত্যার সংবাদ পেয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলে আটক করি। পরে গোপনে ছায়া তদন্ত শুরু করি। তখন বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপন রবিদাস সেতুকে গ্রেপ্তার করি। সেতুর দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যার সরঞ্জামাদি ও নিহত আইয়্যুব আলীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাসেম বিজ্ঞ আদালতে গ্রেপ্তার আসামি মুকুল মিয়া ও তার পুত্র মহসিন হাসানের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।