জামালপুরে টাকা ছাড়াই পুলিশের চাকরি পেলেন দরিদ্র রিকশাচালককন্যা উম্মে মমিন পাখিসহ ৫৮ জন

জামালপুরে বিনা টাকায় প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ কনস্টেবল পদে নির্বাচিত দরিদ্র পরিবারের সন্তান উম্মে মমিন পাখি তার মায়ের সাথে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে পুলিশের প্রশিক্ষণার্থী কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ায় উম্মে মমিন পাখি খুবই খুশি হয়েছে। নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা শুনেই তার চোখে পানি এসে যায়। চাকরি পাওয়ায় খুশিতে আত্মহারা উম্মে মমিন পাখি বলল, এসপি স্যার বলছিল মেধা ও যোগ্যতা থাকলেই চাকরি হবে। আজকে তাঁর কথার প্রমাণ পেলাম। আমার সব পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আমি পুলিশের এই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি।

সে আরো বলল, আমার বাবা খুব গরিব। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার মতো সামর্থ আমাদের নেই। টাকা ছাড়াই আমার চাকরি হয়ে গেল। এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছেন। চাকরিতে যোগ দিয়ে আমি দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করবো। একই সাথে আমার পরিবারকে স্বাবলম্বী করবো।

উম্মে মমিন পাখির বাড়ি জামালপুর পৌরসভার উত্তর দেউরপাড় চন্দ্রা গ্রামে। ওই গ্রামের রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের মেয়ে সে। জামালপুর সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে জুটে গেল পুলিশ কনস্টেবলের চাকির। তার দরিদ্র রিকশাচালক বাবা আমিনুল ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না। বর্তমানে তাদের পরিবারে কষ্টের সীমা নেই।

কনস্টেবল পদে নির্বাচিত শুভ রবিদাসও খুব খুশি। তার বাড়ি জামালপুর সদরের দিগপাইত ইউনিয়নের মাতারপাড়া গ্রামে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে সে। দরিদ্র বাবা-মা, দুই ভাই এক বোনকে নিয়ে তাদের অভাবের সংসার। শুভ বলল, আমার খুব ইচ্ছা ছিল পুলিশের চাকরি করার। আমি এখানে বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো মতো পাস করেছি। আমার মনে হয় যার যোগ্যতা আছে সে পারবেই। আমি পুলিশের চাকরি করে আমার বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াবো।

প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ কনস্টেবলদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। ছবি:বাংলারচিঠিডটকম

১৩ মার্চ বিকেলে জামালপুর পুলিশ লাইন্সের ড্রিলশেডে ট্রেইনি রিক্রুইটমেন্ট কনস্টেবল পদে পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ট্রেইনি কনস্টেবল পদে ৫৫৪ জনের লিখিত পরীক্ষা শেষে ১৮৩ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে থেকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছি ৫৮ জন মেধাবী ছেলেমেয়েকে। এর মধ্যে ৪৯ জন ছেলে এবং ৯ জন মেয়ে রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতা প্রমাণ করে তারা তাদের চাকরি পেয়েছে। আজকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের মেধার মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সাময়িকভাবে নির্বাচিত হয়েছে তারা। এরপর তাদের শারীরিক কিছু পরীক্ষা হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। সেই পরীক্ষাগুলো করে নিয়ে তাদের ভেরিফিকেশন কমপ্লিট হবে। তারপর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হলেই বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত এই বাহিনীতে চাকরি করতে পারবে তারা।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছি। চাকরিপ্রার্থীরা যাতে প্রতারিত না হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রেখেছি। নির্বাচিত ৫৮ জনের যোগ্যতার মূল্যায়নেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাদের কোন টাকা পয়সা দিতে হয় নাই। এই চাকরিতে আবেদন করার জন্য তাদের যে ১২০ টাকা করে খরচ করেছে, সেই টাকাও তাদেরকে আমি ফেরৎ দিবো। মেধা ও যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করলে প্রচারক চক্র বিনা কারণে লাভবান হবে। অনেকেই প্রতারিত হবেন। ছেলেমেয়েদের মেধা ও যোগ্যতার ওপর আস্থা রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পরে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান নির্বাচিত প্রশিক্ষাণার্থী পুলিশ কনস্টেবলদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী সাদিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন মিয়া পুলিশ সুপারের সাথে ছিলেন।