জামালপুরে ট্যাংক বিধ্বংসী মর্টারশেলটি ধ্বংস করেছে সেনাবাহিনী

জামালপুর সদরের কোজগড় এলাকায় পরিত্যক্ত স্থানে পড়ে থাকা ট্যাংক বিধ্বংসী মর্টারশেল। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদরের কোজগড় এলাকায় পরিত্যক্ত স্থানে পড়ে থাকা ট্যাংক বিধ্বংসী শক্তিশালী মর্টারশেল বোমাটি ৯ জানুয়ারি সকালে মাটিতে পুঁতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেছে সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিটের একটি টিম। ৮ জানুয়ারি বিকেলে কোজগড় এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে একটি দোকানের পেছনে গাছগাছড়ার মধ্যে এই মর্টারশেলটির সন্ধান মেলে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মর্টারশেলটি দেখতে ৯ জানুয়ারি ভোর থেকেই উৎসুক জনতার ভিড় জমে ঘটনাস্থল জামালপুর সদরের কোজগড় এলাকায়। বেলা পৌনে ১০টার দিকে ঘাটাইলের ১৯ পদাতিক ডিভিশনের শহীদ সালাহ উদ্দিন সেনানিবাসের একদল সেনা সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেন। এরপর সেখানে আসেন ঘাটাইল সেনানিবাসের ক্যাপ্টেন মোহতাসিমের নেতৃত্বে বোম ডিসপোজাল টিম। পুরো পরিস্থিতি তদারকি করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাইল সেনানিবাসের জিওসি ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আশরাফ কাদের। এছাড়াও জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরাব হোসাইন, র‌্যাব-১৪ জামালপুর সিপিসি’র কম্পানি কমান্ডার মেজর মো. আবরার ফয়সাল সাদী ও জামালপুর সদর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১০টা ৫৭ মিনিটের দিকে বিশেষ নিরাপত্তা পোশাকপরা সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিমের প্রধান ক্যাপ্টেন মোহতাসিম ও অন্যান্য সদস্যরা শক্তিশালী ওই মর্টারশেল বোমাটি পরিত্যক্ত স্থান থেকে তুলে নিয়ে পাশের ফাঁকা স্থানে মাটিতে পুঁতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেন। এ সময় বিকট শব্দে চারদিকের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকার মাটি কেঁপে উঠে। এর আগে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঘটনাস্থলের চারপাশের বসতবাড়ির লোকজন ও উৎসুক জনতাকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়। জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছুক্ষণের জন্য সকল প্রকার যানবাহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।

ট্যাংক বিধ্বংসী মর্টারশেলটি ধ্বংস করার পর বোমা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিম প্রধান ক্যাপ্টেন মোহতাসিম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

শক্তিশালী মর্টারশেলটি ধ্বংস করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং সদরের ইউএনও ও পুলিশের এএসপির উপস্থিতিতে বোম ডিসপোজাল টিমের প্রধান ক্যাপ্টেন মোহতাসিম তাদের জিওসি ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আশরাফ কাদেরের কাছে বোমাটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন। ক্যাপ্টেন মোহতাসিম জানান, বোমাটি তাজা ছিল। এটি ট্যাংক বিধ্বংসী মর্টারশেল। এর গায়ে লেখা আছে এন্টি ট্যাংক এনারর্জা-৯৪, নং ২, অরিজিন ব্রিটেন। সালটা বোঝা যায় না। ৫৩ লেখা আছে। এতে অনুমান করা হচ্ছে এটি ১৯৫৩ সালে তৈরি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়। তবে বোমাটি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রেস ব্রিফিং করা হয়নি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, ঘাটাইল সেনানিবাসের জিওসি ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আশরাফ কাদেরের নেতৃত্বে তাদের বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা মর্টারশেলটি মাটিতে পুঁতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেছে। আপাতত এখন আর সমস্যা নেই। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ট্যাংক বিধ্বংসী শক্তিশালী মর্টারশেল। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে বোমাটি সেখানে কিভাবে এলো, তা সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত করে দেখছে। বোমাটি ধ্বংস করার আগে সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল টিমের ইউনিটের সদস্যরা বোমাটির ছবি তুলে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে পরবর্তীতে এই বোমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছেন বলে জানান ইউএনও।