মহেশপুরে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, সাংবাদিকসহ আহত ২৫

জামালপুরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষের কর্মীরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর-৫ (সদর) আসনের রানাগাছা ইউনিয়নে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনি সহিংসতায় তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, ছয়টি নির্বাচনি প্রচার কেন্দ্র ভাংচুর ও উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার জের ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সেখানে লাঠিচার্জ করে। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ আরও অন্তত ১৫ জন আহত হন। ৩ জানুয়ারি রাত ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামালপুর সদর আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদের নির্বাচনি প্রচারণা শেষে আওয়ামী লীগের ১০/১২ জন কর্মী মোটরসাইলে রানাগাছা ইউনিয়নের মহেশপুর কালিবাড়ীতে নৌকা প্রতীকের প্রচার কেন্দ্রে যায়। তারা নৌকায় ভোটের স্লোগানের পাশাপাশি ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় রাত ৮টার দিকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজাউল করিমের কর্মী-সমর্থকরা নৌকা প্রতীকের কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় নৌকা প্রতীকের চারজন সমর্থক গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা নৌকা প্রতীকের কর্মী মাসুদ রানা শ্যামল, নজরুল ইসলাম ও সিফাতের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর জের ধরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের মহেশপুর কালিবাড়ী প্রচার কেন্দ্র ভাংচুর করে।

জামালপুরে ঈগল প্রতীকের প্রচার কেন্দ্রে হামলা-ভাংচুর করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বরকত উল্লাহর নেতৃত্বে জামালপুর সদর থানার পুলিশ ফোর্সসহ ওসি ও বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যায়। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাজারো সমর্থক মহেশপুর কালীবাড়ী মোড়ে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রচার কেন্দ্র ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল। খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মীসমর্থক নিয়ে ঘটনাস্থলে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম। সড়ক অবরোধ তুলতে সেখানে ফের বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বক্তব্য নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা সেখানে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে সড়ক অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।

এ সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। পুলিশ ও র‌্যাবের লাঠির আঘাতে চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাম্যান বেলায়েত হোসেন শান্ত ও অনলাইন পত্রিকা দৈনিক শ্রমিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক শেখ আশিক মাহমুদসহ পাঁচজন সাংবাদিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত ১৫ জন সমর্থক আহত হন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেলায়েত হোসেন শান্ত ও শেখ আশিক মাহমুদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী ইয়ার আলী ও খোকা মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, এএসআই মো. শহিদুল ইসলাম ও এএসআই মো. এরশাদ গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাম্যান বেলায়েত হোসেন শান্ত।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

এসব ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগনেতা মো. রেজাউল করিম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা আজকে মহেশপুর কালিবাড়ীতে ন্যাক্কারজনক ও সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা জোর করে ভয়ভীতি ও অনিয়ম করে আজকে রানাগাছা ইউনিয়নে আমার ছয়টি প্রচার কেন্দ্র ভাংচুর করেছে তারা। ঘটনার প্রতিবাদে সেখানে আমার বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করলে তাদেরকে শান্ত করতে রাতেই মহেশপুর কালিবাড়ীতে যাই। সেখানে এসি-ল্যান্ড ও সদর থানার ওসিও ছিলেন। সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বলতেছি। এরই মধ্যে আকস্মিক বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা পেছন থেকে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন কর্মী আহত হন। নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটিয়ে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছে। আমি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন তরফদার বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক লুৎফুল কবীর বাবুর নেতৃত্বে মহেশপুর কালীবাড়ীতে নৌকার প্রচার কেন্দ্রের সামনে আমাদের কর্মীদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়েছে। হামলায় চারজন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আমাদের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার কেন্দ্র ভাংচুর করেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেরাই ভাংচুর করে আমাদের কর্মীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত কবীর বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ৩ জানুয়ারি রাতে মহেশপুর কালিবাড়ীতে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা শুনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ঘটনা স্থলে যাই। পরিস্থিতি শান্ত করে সেখান থেকে চলে আসি। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করলে পুনরায় সেখানে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে যাই। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। তখন তাদেরকে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের একজন এসআই ও দু’জন এএসআই গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে শুনেছি সেখানে কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। মহেশপুর কালিবাড়ীতে পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেল তিনটি কোন পক্ষের তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। ওই নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।