ফের শুরু হয়েছে দেওয়ানগঞ্জে ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা, নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ অন্যান্য অন্যান্যরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মদন মোহন ঘোষ
দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ফের শুরু হয়েছে ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা। এতে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ডলারের ব্যবসার আর প্রতারণা করবে না বলে পুলিশের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতারক চক্রের সদস্যরা। ২৭ সেপ্টেম্বর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও চোরা চালান প্রতিরোধ কমিটির আলোচনা সভায় ডলার ব্যবসার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

জানা যায়, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন কৌশল করে ফাঁদ পাতে। প্রতারকরা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শহরের লোকজনকে টার্গেট করে। তারা ছদ্মনামে ও ছদ্মবেশে বড় ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবি, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনদের বাসাবাড়িতে কাজ নেয়। আবার অনেকেই রাজিমিস্ত্রী, দিন মজুরী ও লেবারি করে। কাজ নিয়ে বাসা বাড়ির লোকজনদের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলে এবং তাদের সঙ্গে ধর্ম আত্মীয়তাও গড়ে তুলে। একপর্যায়ে কম দামের ডলারের কথা বলে বাহাদুরাবাদ নিজ গ্রামে তাদের ডেকে এনে আসল কিছু ডলার দেখিয়ে বাহাদুরাবাদ দুর্গম কুতুবেরচর, খুটারচর, হাসেমপুর এলাকায় নিয়ে যায়। ডলারের দামদর মিটিয়ে বায়না করে নমুনা নিয়ে যায়। পুনরায় টাকা নিয়ে ডলার কিনতে আসলে তাদের টাকা কেড়ে নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিটিয়ে আহত করে। প্রতারণার শিকার লোকজন প্রাণ হারানোর ভয়ে পালিয়ে আসে। অনেকেই থানায় মামলা অভিযোগ করেছে। ওই এলাকায় অনেকের নামেই একাধিক মামলা রয়েছে।

ডলার কিনতে আসা কুমিল্লার লালমাই গ্রামের জামাল হোসেন জানান, তিনি ৩ লাখ টাকা নিয়ে কুতুবের চর ডলার কিনতে এসেছিলেন। তাকে পিটিয়ে আহত করে ৩ লাখ টাকা কেড়ে নিয়েছে।

ঢাকা উত্তর খান তেরমোখা গ্রামের সজিব আহম্মেদ। তিনিও এসেছিলেন ডলার কিনতে। তাকেও পিটিয়ে জখম করে ৩ লাখ টাকা কেড়ে নিয়েছে।

গাজীপুর সদরের করমতলার কবির জানান, তার থেকেও আড়াই লাখ টাকা কেড়ে নিয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিরুজ্জামান রাখাল জানান, প্রতারক ডলার ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদেরকে গ্রেপ্তার করা হলে ডলার ব্যবসা বন্ধ হবে।

দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি নতুন এসেছি, ডলার ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন জানান, প্রতারকদের ফাঁদে পরে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন টাকা পয়সা খোয়াচ্ছে।

২০১৬ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের হাসেমপুর, খুটারচর, শেখপাড়া, কুতুবেরচর, পোল্যাকান্দির অর্ধশত যুবক শপথ ও তওবা করেছিলেন ডলার, পুতুল, পিলেরের প্রতারণা না করার জন্য। তওবা পাঠ করিয়েছিলেন মাওলানা আজিমুদ্দিন শ্যামপুরী। ওই দিন উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, দেওয়ানগঞ্জ সার্কেল তানভীর আহমেদ, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিরুজ্জামান রাখালসহ জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। শপথ নেওয়ার কিছুদিন পর শপথ ভঙ্গ করে তারা আগের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।