জামালপুরে নগর উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে শিশুর জন্য বিনিয়োগ কার্যক্রম

নবজাতকের প্রতিটি পরিবারের মাঝে ১০টি করে গাছের চারা বিতরণ করা হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিশেষ প্রতিবেদক:
জামালপুরে কোন সন্তান জন্ম নেবার খবর পাওয়া মাত্রই তার জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার ব্যতিক্রম পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগের খবর পাওয়া গেছে জামালপুর পৌরসভাধীন ১২ নং ওয়ার্ডে। শিশুর জন্য বিনিয়োগ এ মহৎ উদ্দেশ্যে জামালপুরে নগর উন্নয়ন কমিটি এলাকায় কোন শিশুর জন্ম হলেই সেই পরিবারে উপহার হিসেবে প্রদান করছে ১০টি করে ফল ও কাঠ গাছের চারা। তাদের উদ্দেশ্য একটাই শিশুটি বেড়ে উঠার সাথে সাথে গাছগুলোও বড় হবে। ফল গাছ পুষ্টি চাহিদা মিটাবে আর কাঠ গাছ ২৫ বছর পর আর্থিক চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া এলাকায় বনায়ন সৃষ্টি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। অভিনব এ উদ্যোগ শুরু হয়েছে জামালপুর পৌরসভা, লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নে। এ পর্যন্ত শতাধিক পরিবারের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয়।

৯ জুলাই জামালপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দেউরপাড় চন্দ্রা নগর উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে প্রতিটি নবজাতক হওয়া প্রতিটি পরিবারে ১০টি করে কাঠ ও ফলের চারা উপহার দেওয়া হয়। বিতরণ কাজ উদ্বোধন করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম খান। এতে অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্ল্ড ভিশন জামালপুর এপির এরিয়া ম্যানেজার সাগর ডি কস্তা, উন্নয়ন সংঘের এপি ম্যানেজার মিনারা পারভীন, সিডিও সাব্বির হোসেন, সাংবাদিক মাসুদুর রহমান চৌধুরী, নগর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

নবজাতকের প্রতিটি পরিবারের মাঝে ১০টি করে গাছের চারা বিতরণ করা হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

উন্নয়ন সংঘের এপি ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন বলেন, নগর উন্নয়ন কমিটির এ ধরনের কাজে আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। কমিউনিটি বা এলাকার লোকজন বিশেষ করে কমিটির নেতৃত্বে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে ইনভেস্ট করছে এর ধারাবাহিকতা থাকলে সত্যিই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগ বিশাল ভূমিকা রাখবে।

কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম খান বলেন এপির কাজে আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে আমরা নিজেদের অর্থায়নে ছোট ছোট কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। শিশুদের জন্য বিনিয়োগ, প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক উপকরণ বিতরণসহ নানা কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন আমরা বেকার নারী ও পুরুষদের জন্য অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টির উদ্যোগও নিয়েছি।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের এপি ব্যবস্থাপক সাগর ডি কস্তা বলেন, জামালপুরে এরিয়া প্রোগ্রাম কাজ পরিচালনার শুরু থেকেই নতুন নতুন ধারণায় বহুমাত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এলাকায় গেলেই অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায়। এধরনের উদাহরণযোগ্য কাজ আগামীতে আরও বাড়বে।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম দেউরপাড় চন্দ্রা নগর উন্নয়ন কমিটির গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতদিন আমরা দেখে এসেছি এলাকায় বিভিন্ন কমিটি গঠন হয় উপর থেকে কিছু পাওয়ার জন্য। আর তুলনামূলক দরিদ্র এলাকা হলেও দেউরপাড় এলাকার এই কমিটি নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে শিশুদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ব্যতিক্রম পরিকল্পনা করছে। এটা একটা উদাহরণযোগ্য কাজ। তিনি নগর উন্নয়ন কমিটি ও জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, এরিয়া প্রোগ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর ইউনিয়ন এবং জামালপুর পৌরসভার ১, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩৯টি গ্রামে ২৩ হাজার ২৮২ জন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। কর্মসূচির সকল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্যক্রমের মধ্যে জীবিকায়ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াস এবং স্পন্সরশীপ অন্যতম। এরমধ্যে আবার খানা জরিপ, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সম্মত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জিঙ্ক ধান উৎপাদন, অতিদারিদ্রের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দল গঠন, সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো, প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিপদাপন্ন শিশুর তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে হংকং।