শেরপুরে জুম ফসল কেটে ফেলায় বন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও

শেরপুরে জুম ফসল কেটে ফেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের শ্রীবর্দীর বনাঞ্চলে রোপণ করা বিপুল পরিমাণ জুম ফসল কেটে ধ্বংস করার অভিযোগে বন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। ১৩ আগস্ট দুপুরে জেলার পাহাড়ি অঞ্চল ঘেরা তিন উপজেলার ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাসাস), ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনসহ প্রায় ১৮টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে শ্রীবর্দীর বালিজুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরা ও রেঞ্জ কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে সমাবেশ করে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১২ আগস্ট দুপুরে বালিজুরি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বনবিভাগের স্টাফ ও কিছু দেশীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার খ্রিষ্টান পাড়ার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের পাঁচজন নারীর জুম ক্ষেত ও বসতভিটার চারা গাছ কেটে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় কেটে ফেলা হয় প্রায় বিশ বিঘা জমিতে রোপণ করা বরবটি, শিমুল আলু, বেগুন ও সুপারি গাছের বাগান। এ ঘটনায় ক্ষতির শিকার হন ভারতী মৃ (৫৫), সভানী সিমসাং (৫৬), বিধবা সবিতা মৃ (৬০), কমলা রেমা (৪৫) ও প্রতিবন্ধী পয়মনি চিরান (৪৬)।

এছাড়া পরবর্তীতে আবারও গাছের চারা রোপণ করলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় বনকর্মীরা।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) শ্রীবর্দী থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাঞ্চন মারাক, কোচ সংগঠনের নেতা মিথুন, গারো নেতা মিখায়েল নেংমিনজা, নারী নেত্রী রিনিকা দালবত, রনু নংরেক বলেন, আমরা যুগ-যুগ ধরে এই জমিতে বসবাস ও জুম চাষ করে আসছি। যে যুগে আমরা টিকে ছিলাম, সে যুগে বন সংরক্ষণ আইনের হদিস ছিলো না। আমরা তখন থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছি। যখন প্রতিটা মুহূর্তে বণ্যপ্রাণী আতঙ্কে জীবন চলতো। তখন পাকিস্তানী শাসন বা সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম নেয়নি।

শ্রীবর্দীর বনাঞ্চলে রোপণ করা বিপুল পরিমাণ জুম ফসল কেটে ধ্বংস করা হয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ইংরেজ আমলে আমার পূর্বপুরুষরা টিপু গারোর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ করেছিলো। পরবর্তীতে জানকু পাঠাং ও ধুবরাজ পাঠাং ওই বিদ্রোহে যুক্ত হন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কোনদিন-কোনকালেই সুখে থাকতে পারিনি। পর্যায়ক্রমে ইংরেজ, জমিদার, ডাকাত, পাকিস্তানী হানাদারদের মাধ্যমে অত্যাচারিত হয়েছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষে থেকেও এখন প্রতিনিয়ত আমাদের উচ্ছেদ আতঙ্ক নিয়ে বাঁচতে হয়।

এর আগে বহুবার বনবিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের রোপণ করা জুম ফসল নষ্ট করেছে। এবারই প্রথম আমরা ১৮টি সংগঠন একত্রিত হয়ে ফসলের ক্ষতির প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছি।

বনের জমিতে জুম চাষ করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ১২ আগস্ট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালিদের রোপণ করা বিভিন্ন সবজি বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। যদি আবারও কেউ চাষাবাদের চেষ্টা করে এমন ব্যবস্থাই নেয়া হবে।

তবে তিনি অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।