দানবীর হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদারের ১০১তম মৃত্যুবার্ষিকী

জাহিদুর রহমান উজ্জল❑
তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, দানবীর, সমাজ সেবক ও মাদারগঞ্জের প্রথম তালুকদার পদবীপ্রাপ্ত ও পশ্চিম জামালপুরের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বালিজুড়ি এফ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদারের ১০১তম মৃত্যুবার্ষিকী ৫ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বালিজুডি এফ এম উচ্চ বিদ্যালয় তার গ্রামের বাড়িতে কোরআনখানী, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।

হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদার ১৮৩৫ সালে চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা বাজিত উল্লাহ মন্ডল ছিলেন সাধারণ কৃষক।

হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদার ছোটবেলা কোরআন শিক্ষা ও গ্রামে মিঞাজি বাড়িতে টোল বিদ্যালয়ে বর্ণমালা ও শুভংকরী অংক শাস্ত্র শিখেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সংসারী কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। পরে তিনি ব্যবসা শুরু করেন।

হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদার এলাকায় ধানচাল এবং মহাজনী শুরু করেন। তিনি কোলকাতা, আসাম ও অন্যান্য স্থান থেকে নানা জিনিসপত্র আমদানি করে এলাকায় বিক্রি করে প্রচুর উন্নতি করেন।

তিনি পাশের গ্রামে প্রথম বিয়ে করেন। এই পক্ষে চার সন্তান জন্ম নেয়। ফারান উদ্দিন তালুকদার ছাড়া সব সন্তান বাবার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বাড়ির পাশে খান বংশের সন্ধাজান বিবিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বুদ্ধিমান স্ত্রীর গুণে তার ব্যবসায় উন্নয়ন আরো বেড়ে যায়।

তিনি মাদারগঞ্জে প্রথম তালুকদারী ক্রয় করেন। তালুকদার পদবী বহন করেন।

২য় স্ত্রীর ঘরে ৪ ছেলে ও ১ মেয়ের জন্ম হয়। তাঁর ৩য় ছেলে রফাত উদ্দিন তালুকদার বালিজুড়ি ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান ও ছোট ছেলে এ কে এম বফাত উদ্দিন তালুকদার দুইবার প্রাদেশিক পরিষদের এমএলএ নির্বাচিত হন।

হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদার পায়ে হেঁটে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করার সিন্ধান্ত নেন। তিনি কোলকাতা, বোম্বাই, ইরান হয়ে সৌদিআরবে প্রবেশ করেন এবং হজ্ব পালন করেন। পরে তিনি জাহাজযোগে সৌদিআববে গিয়ে ২য়বার হজ্ব পালন করেন।

হাজী ফাজেল মাহমুদ তালুকদার এই অঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য ১৯১০ সালে এককালিন ৩০ হাজার রূপার মুদ্রা দান করে বালিজুড়ি ফাজেল মাহমুদ (এফ এম) উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি বাড়ির পাশে একটি সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর অর্থ দান করেন। সে সময় তাঁর দান সর্ম্পকে মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় বঙ্গের হাতেম নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি বিশাল তালুকদারী সামলে সাহিত্য রচনাও করতেন। বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনে অর্থ সাহায্য দিতেন। তিনি অনেকগুলো কবিতা ও লোক ছড়া রচনা করে গেছেন।

এই মহান ব্যক্তি ১৯১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর তার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে তাঁকে সমাধিত করা হয়।

তিনি আমার বাবার দাদা।