খুনের মামলায় প্রতিপক্ষের হুমকিতে ভীত বাবা-মা

তাসফিয়া হুমায়রা হৃদয়

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে ধানের আটি বন্টনকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে দুই সপ্তাহ আগে এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারী প্রতিপক্ষের নির্মম নির্যাতনে খুন হন। নিহতের নাম তাসফিয়া হুমায়রা হৃদয় (২৮)। স্বজনদের অভিযোগ হৃদয়কে তার চাচা, জেঠা ও চাচাতো ভাই, বোনরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। উল্টো মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে আসামিরা। যে কারণে ভীত হয়ে পড়েছেন নিহতের বাবা-মা। অন্যদিকে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ বিভাগ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের দিকপাড়া গ্রামে ১৪ মে বৃহস্পতিবার মানসিক প্রতিবন্ধী নারী তাসফিয়া হুমায়রা হৃদয়কে শারীরিকভাবে নির্মম নির্যাতন করে তার চাচা, জেঠা, চাচাতো ভাই ও বোনেরা। ওইদিন ধানের আটি বন্টন নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় তাসফিয়া গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরে তাকে জামালপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মে রোববার মৃত্যু হয় তাসফিয়ার।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের মা জোবাইয়া খানম। তিনি বলেন, ধানের আটি নিয়ে বিবাদের জেরে প্রতিপক্ষ হাসেম, বাবুল, রনি ও তার মা এবং বড় বোন তাসফিয়াকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে তারা চুলের মুঠি ধরে উপর্যুপরি কিল-ঘুঁষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে পেটেও বেশ কিছু লাথি মারে। এরপর বাঁশ দিয়ে তাকে পেটানো হয়। এ অবস্থায় তাসফিয়া সঙ্গাহীন হয়ে পড়ে। পরে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকরা জানায় আপনার মেয়ে কথা বলতে পারছে না। তাই তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে জানায় তাসফিয়ার পেটে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে এবং রক্ত জমাট হয়ে গেছে। এ কারণে আমার মেয়েটা মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর আগে তাসফিয়ার শেষ ইচ্ছা ছিল নির্যাতনকারীদের শাস্তি।

তাসফিয়ার বাবা ও মামলার বাদী হুমায়ুন কবির বলেন, মামলার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হয়নি কোন আসামি। উল্টো মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। যে কারণে ভীত এবং হতাশ আমরা।

প্রতিবেশী হোসনে আরা ও রাশেদা বলেন, তাসফিয়ার কথাবার্তা ও আচার আচরণ অনেক ভালো ছিল। সে একজন প্রতিবন্ধী। তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

৭ জুন দুপুরে এ খবর লেখার সময় আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে। তিনি জানান, ওই ঘটনায় ৬/৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

অন্যদিকে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম।