ভারতের বোলারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : ভারতীয় বোলিং তোপে ১৪ নভেম্বর ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনই অলআউট হয় সফরকারী বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট হাতে নেমে ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ১ উইকেটে ৮৬ রান তুলেছে ভারত। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৪ রানে পিছিয়ে টিম ইন্ডিয়া।

ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক টেস্টে টস জিতেন বাংলাদেশের মোমিনুল হক। উইকেটে সামান্য ঘাস থাকায় প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন মোমিনুল। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংসের শুরু করেন দুই বাঁ-হাতি সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস। ক্রিজে গিয়েই বেশ চাপে পড়েন তারা।

ভারতীয় দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এ প্রথম চার ওভারে তিনটি মেডেন দেন তারা। রান আসে মাত্র ২। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে গালি-পয়েন্টের মাঝ দিয়ে ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি মারেন সাদমান। পরের ওভারে দলকে দ্বিতীয় বাউন্ডারির স্বাদ দেন ইমরুল। ঐ ওভারের শেষ বলে ৬ রান করা ইমরুলের বিদায় নিশ্চিত করেন উমেশ।

দলীয় ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে ভারতের আরেক পেসার ইশান্ত শর্মার বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ইমরুলের সঙ্গী হন সাদমানও। তার উইলো থেকেও আসে ৬ রান। ফলে ১২ রানেই বিদায় ঘটে বাংলাদেশের দুই ওপেনারের।

দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোমিনুল ও মোহাম্মদ মিঠুন। সর্তকতার সাথেই খেলতে থাকেন দু’জনে। এমন অবস্থায় ১৭ ওভার পর্যন্ত কোন বাউন্ডারির দেখা পাননি মোমিনুল ও মিঠুন। ১৮তম ওভারে গিয়ে বাউন্ডারির দেখা পান মিঠুন। ভারতের তৃতীয় পেসার মোহাম্মদ সামির বলকে স্লিপ দিয়ে বাউন্ডারি মারেন মিঠুন। কিন্তু ঐ ওভারের শেষ বলে সামির বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন মিঠুন। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ১টি চারে ১৩ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে মোমিনুলের সাথে ১৯ রানের জুটি গড়েন মিঠুন।

দলীয় ৩১ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মোমিনুল ও মুশফিকুর রহিম। মিঠুনের সাথে জুটিতে ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্লিপে একবার ক্যাচ দেন মোমিনুল। কিন্তু সেটি আয়ত্বে আনতে পারেননি আজিঙ্কা রাহানে। এরপর দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে তিনটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন মোমিনুল। অন্য প্রান্তে ভারতীয় বোলারদের বুঝেশুনে খেলতে থাকেন মুশফিকুর। তবে ২৪তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিককে আউট করার ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলেন উমেশ। অফ-স্টাম্পের বাইরের বলকে খেলতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন মুশফিক। কিন্তু ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়েও তার হাতে আটকে রাখতে পারেননি ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তবে ঐ ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি দিয়ে বাংলাদেশের স্কোর হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দেন মোমিনুল।

জীবন পেয়ে দু’টি চার মারেন মুশফিক। তবে দু’টিতে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো। তাই প্রথম সেশনে আর কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ২৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৩ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় টাইগাররা। এসময় মোমিনুল ২২ ও মুশফিক ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারো জীবন পান মুশফিক। অশ্বিনের বলে স্লিপে রাহানে ক্যাচ ফেলেন মুশফিকের। দ্বিতীয় জীবন পেয়ে আরও বেশি সর্তক হয়ে পড়েন তিনি। রান তোলার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকার দিকে মনোযোগি হয়ে উঠেন মুশফিক। তাই খুচরা রান নিয়ে পরের ৩৪ বলে সন্তুষ্ট থাকেন তারা।

তবে ৩৪তম ওভারে ভারতের অশ্বিনকে ১টি করে ছক্কা-চার মারেন মুশফিক। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় মুশফিকের। ফলে মুশফিক-মোমিনুলের ব্যাটিং-এ শতরানের কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই জুটি দলকে শতরানের স্বাদ নিতে পারেননি। দলীয় ৯৯ রানে মোমিনুলকে দারুন এক ঘুর্ণিতে বোল্ড করেন ভারতের অশ্বিন। এতে দেশের মাটিতে ২৫০ উইকেট শিকারের স্বাদ নেন তিনি। ৬টি চারে ৮০ বলে ৩৭ রান করেন মোমিনুল। মোমিনুল-মুশফিক জুটি ৬৮ রান দলকে উপহার দেন।

নয়া অধিনায়কের বিদায়ের ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন মাহমুদুল্লাহ। উইকেটে গিয়ে ভারতের বোলারদের পরিকল্পনা আয়ত্বে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন মাহমুদুল্লাহ। দ্রুত বাউন্ডারিও তুলে নেন তিনি। কিন্তু ৪৪তম ওভারে রাহানের কল্যাণে জীবন পান মাহমুদুল্লাহ। আবারো দুর্ভাগা বোলার অশ্বিন। স্লিপে ক্যাচ ফেলেন রাহানে।

জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি মাহমুদুুল্লাহ। সেই অশ্বিনের বলেই বোল্ড হয়ে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মাহমুদুুল্লাহ। ৩০ বলে ১টি চারে ১০ রান করেন তিনি। অবসান ঘটে মুশফিকের সাথে ১৬ রানের জুটির।

এরপর মুশফিকের সাথে জুটি বাঁধেন উইকেটরক্ষক হিসেবে এ ম্যাচে খেলতে নামা লিটন দাস। প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন লিটন। পরবর্তীতের ভারতের পঞ্চম বোলার রবীন্দ্র জাদেজাকে দু’টি ও সামিকে ১টি চার মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন লিটন।

কিন্তু চা-বিরতির আগের ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে ডাবল আঘাত হানেন ভারতের পেসার সামি। ৫৪তম ওভারের শেষ দু’বলে মুশফিক ও মেহেদি হাসান মিরাজকে তুলে নেন তিনি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৫ বলে ৪৩ রান করেন ৩ ও ১৪ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক। সামির বলে বোল্ড হন মুশফিক। আর নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন মিরাজ। ১ বলে শুন্য রানে ফিরতে হয় তাকে। এতে ব্যাটিং-বিপর্যয়ের মুখে পড়ে চা-বিরতিতে যেতে হয় বাংলাদেশকে। এ সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫৪ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪০ রান।

বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ডেলিভারিতেই লিটনের বিদায় নিশ্চিত করেন ভারতের ইশান্ত। কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪টি চারে ৩১ বলে ২১ রান করে আউট হন লিটন। দলীয় ১৪০ রানেই পরপর তিন বলে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। উইকেট পতনের তালিকায় লিটন ছিলেন অষ্টম ব্যাটসম্যান।

বিরতির আগে শেষ দু’বলে মুশফিক-মিরাজকে শিকার করে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সামি। কিন্তু সামির হ্যাট্টিক রুখে দেন বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম। কিন্তু উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাইজুল। রান আউটের ফাঁদে পড়েন তিনি। মাত্র ১ রান করে আউট হন তাইজুল।

এরপর বাংলাদেশের শেষ উইকেট তুলে নিতে খুব বেশি সময়ক্ষেপন করতে হয়নি ভারতের বোলারদের। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান এবাদত হোসেনের উইকেট উপড়ে ফেলেন ভারতের উমেশ। ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এবাদত ২ রান করেন। ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আবু জায়েদ। ভারতের সামি ৩টি, অশ্বিন-ইশান্ত-উমেশ ২টি করে উইকেট নেন।

বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হবার পর শেষ সেশনে ব্যাট হাতে নামে ভারত। মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন সর্বশেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল-সেঞ্চুরিতে ৫৩৫ রান করা রোহিত শর্মা। তবে এই ইনিংসে বড় স্কোর করতে পারেননি ইনফর্ম রোহিত। অষ্টম ওভারে বিদায় ঘটে তার। বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ১টি চারে ১৪ বলে ৬ রান করেন রোহিত। ফলে দলীয় ১৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত।

রোহিতকে হারানোর পর দলের হাল ধরেন আগারওয়াল ও চেতেশ্বর পূজারা। রানের চাকা সচল রেখে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন আগারওয়াল-পূজারা। কিন্তু এই জুটি ভাঙ্গার পথও তৈরি করেছিলেন আবু জায়েদ। ২৪তম ওভারে দলীয় ৭৯ রানে আগাওয়াল যখন ব্যক্তিগতভাবে ৩২ রানে, তখন স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাতের নাগালে থাকা সহজ ক্যাচ ফেলেছেন বাংলাদেশের ইমরুল। তাই দিনের শেষটায় উইকেট শিকারের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২৬ ওভারে ১ উইকেটে ৮৬ রান তুলে দিন শেষ করে ভারত। আগারওয়াল ৬টি চারে ৮১ বলে ৩৭ ও পূজারা ৭টি চারে ৬১ বলে ৪৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেন। দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রান যোগ করেছেন আগারওয়াল-পূজার। বাংলাদেশের আবু জায়েদ ২১ রানে ১ উইকেট নেন।

স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস :
সাদমান ইসলাম ক সাহা ব ইশান্ত ৬
ইমরুল কায়েস ক রাহানে ব উমেশ ৬
মোমিনুল হক বোল্ড ব অশ্বিন ৩৭
মোহাম্মদ মিঠুন এলবিডব্লু ব সামি ১৩
মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব সামি ৪৩
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব অশ্বিন ১০
লিটন দাস ক কোহলি ব ইশান্ত ২১
মেহেদি হাসান মিরাজ এলবিডব্লু ব সামি ০
তাইজুল ইসলাম রান আউট (জাদেজা/সাহা) ১
আবু জায়েদ অপরাজিত ৭
এবাদত হোসেন বোল্ড ব উমেশ ২
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-১) ৪
মোট (অলআউট, ৫৮.৩ ওভার) ১৫০
উইকেট পতন : ১/১২ (ইমরুল), ২/১২ (সাদমান), ৩/৩১ (মিঠুন), ৪/৯৯ (মোমিনুল), ৫/১১৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৪০ (মুশফিক), ৭/১৪০ (মিরাজ), ৮/১৪০ (লিটন), ৯/১৪৮ (তাইজুল), ১০/১৫০ (এবাদত)।
ভারত বোলিং :
ইশান্ত : ১২-৬-২০-২,
উমেশ : ১৪.৩-৩-৪৭-২,
সামি : ১৩-৫-২৭-৩ (ও-১),
অশ্বিন : ১৬-১-৪৩-২,
জাদেজা : ৩-০-১০-০।
ভারত প্রথম ইনিংস :
মায়াঙ্ক আগারওয়াল অপরাজিত ৩৭
রোহিত শর্মা ক লিটন ব আবু জায়েদ ৬
চেতেশ্বর পূজারা অপরাজিত ৪৩
অতিরিক্ত ০
মোট (১ উইকেট, ২৬ ওভার) ৮৬
উইকেট পতন : ১/১৪ (রোহিত)।
বাংলাদেশ বোলিং :
এবাদত : ১১-২-৩২-০,
আবু জায়েদ : ৮-০-২১-১,
তাইজুল : ৭-০-৩৩-০। সূত্র:বাসস।