পিংনায় ৩০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গুলি, আহত অর্ধশত

পিংনায় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। সংঘর্ষ চলাকালে সরিষাবাড়ী-ভুয়াপুর প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। ২৮ ডিসেম্বর সকালে উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের নরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১ মে পিংনা ইউনিয়নের নরপাড়া গ্রামে বালু ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে এক সংঘর্ষে পিংনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম আকন্দের ছেলে আওয়ামী লীগকর্মী ও মুদিদোকানি জাহিদুল ইসলাম আকন্দ নিহত হন। এ ঘটনার জের ধরে নিহত জাহিদুলের চাচাতো ভাই ইউসুফ আকন্দ ও আসামি পক্ষের তোফাজ্জল হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

সম্প্রতি জাহিদুল হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ২৮ ডিসেম্বর সকাল আটটার দিকে তোফাজ্জল হোসেনের লোকজন ইউসুফ আকন্দকে সোনামুই বাজার থেকে সাহাপাড়ায় ধরে নিয়ে রামদা ও হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিপক্ষের ২২টি পরিবারের অন্তত ৩০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ সময় উভয়পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। পরে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে নাসির উদ্দিন নামের একজনকে পুলিশ আটক করলে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। আটক নাসিরকে স্থানীয়রা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও চারটি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত গুলিবিদ্ধরা হলেন নুরুল ইসলাম আকন্দ (৭৫), জনি, আক্তার, মারুফ হোসেন, শরিফ ও সামছুল আকন্দ। এ ছাড়া সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর ইউসুফ আকন্দ ও গোলাম মোস্তফাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পিংনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জানান, তোফাজ্জল ও তার লোকজন সব সময় এলাকায় নানা বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়। তার নেতৃত্বেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আওয়ামী লীগের হতে পারে না। তারা যে-ই হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান এ ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও চার রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।