জেএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচে ল্যাপটপ কেনার স্বপ্ন

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার চার প্রতারক। যারা ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করতো। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

অনলাইনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ভূয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের একটি দলকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। ওই চক্রের এক সদস্য শেরপুরের বুলবুল ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে একটি ল্যাপটপ কিনে তার এই অবৈধ ব্যবসা আরো বড় করার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ায় তার সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে। র‌্যাব-১৪ জামালপুর-সিপিসি-১ এর একটি দল ৪ নভেম্বর সকালে শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর এলাকা থেকে বুলবুলসহ ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি ও জেএসসিসহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার আসল ও ভুয়া প্রশ্নপত্র আদান-প্রদান চক্রের কার্যক্রম নজরে এলে র‌্যাবের জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান ৪ নভেম্বর সকাল সাতটার দিকে পাশের শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর বাজারে অভিযান চালান। এ সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মুঠোফোন সেট জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা হলো- শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরভাবনা কান্দাপাড়া গ্রামের এস এম বেলায়েত হোসেনের ছেলে মনোয়ার হোসেন বুলবুল (১৬), একই এলাকার শেখ মাইনুদ্দিনের ছেলে সাইম আহমেদ মিলন (১৫), ইদ্রিস আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৩) ও খলিল মিয়ার ছেলে সোহাগ রানা (১৬)। তারা সবাই ছাত্র। তাদের মধ্যে বুলবুল ও মিলন চরমোচারারিয়া ইউনিয়নের উম্মে ছালমা বিদ্যানিকেতনে দশম শ্রেণিতে, সোহাগ কামারের চর কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে এবং শফিকুল শেরপুর সরকারি কলেজে স্নাতক হিসাব বিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্র। শফিকুল পড়ালেখার পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করে। ভুয়া প্রশ্নপত্র ক্রেতাদের টাকা শফিকুলের বিকাশ বা রকেট হিসাবে লেন- দেন করা হতো।

র‌্যাব ও সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে আটক বুলবুল জানায়, ফেসবুকে নিজের খোলা ‘সিকিউরিটি এনাউন্সমেন্ট বাজটিম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুকে ‘সিক্রেট এনথনি বাজ’ নামের গ্রুপের এডমিন মাহমুদ সজিবের ফেসবুক আইডিতে প্রশ্নপত্র বিষয়ে তার গোপন যোগাযোগ হয়। বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে টাকা লেদ-দেন হলে তারা অতিসতর্কতার জন্য ‘টেলিগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ করে। পরে তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে থাকে।

বুলবুল আরো জানায়, গত বছর এসএসসি পরীক্ষার শেষের দিকে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অনেক টাকা রোজগার করেছে। গত বছর প্রশ্নপত্র কমন পড়ায় ভালো ব্যবসা হওয়ায় এবারও একই কায়দায় জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রির পরিকল্পনা করে। কিন্তু এবার প্রশ্ন কমন না পড়ায় নিজেরাই জেএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র ফেসবুকে আপলোড করে আকর্ষণ ধরিয়ে টাকা রোজগার শুরু করে। এবার একটি দামি ল্যাপটপ কিনে এই ব্যবসা আরো বড় করার স্বপ্ন দেখছিল সে। কিন্তু র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ায় তার সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে।

র‌্যাবের জামালপুর-সিপিসি-১ এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে অবৈধ টাকা উপার্জনের পাশাপাশি সমাজে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে আসছিল। এই চক্রের মূলহোতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।