জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র খননে ৩১০০ কোটি, পাট গবেষণা উপকেন্দ্র হবে ৩৭ কোটি টাকায়

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম

আজিজুর রহমান ডল॥
জামালপুর জেলার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় এবার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের সভায়। ২ অক্টোবর রাজধানীর শেরে বাংলানগরে একনেকের সভার সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বড় এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

অপরদিকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নিরলস প্রচেষ্টায় জামালপুর জেলার উন্নয়ন ও পরিচিতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন একটি প্রকল্প। সেটি হলো পাট গবেষণা উপকেন্দ্র। জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় এই পাট গবেষণা উপকেন্দ্রটি স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ অক্টোবর ৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।

জানা গেছে, এক সময় পাটসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য পরিবহনে ব্রহ্মপুত্রের নৌপথের ঐতিহ্য ছিল। এক সময় সারা বছর ধরেই নদীতে পানি থাকতো। শুকনো মৌসুমে সেই পানি সেচে কৃষি কাজে পানির চাহিদা মিটতো। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেই নাব্যতা আর নেই। দেশের চারটি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথে উন্নীত করে সহজে, সাচ্ছন্দ্যে, নিরাপদে এবং কম খরচে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নদী শাসনের এই বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। চারটি নদী খনন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই টাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ১০০ মিটার প্রশস্ত এবং ৩ মিটার গভীর করে খনন করা হবে।

ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়ায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, নদী শাসনের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নৌপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের ব্যাপক সুবিধা সৃষ্টি হবে। যমুনা নদী হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে চলাচল করবে বড় বড় লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। এতে করে রেলপথ ও সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের চাপ কমে আসবে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে সারা বছর ধরে পানি থাকবে। ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি জেগে উঠবে। এসব ভূমিতে সরকারি-বেসরকারিভাবে ভারি শিল্প কলকারখানা স্থাপন করে জামালপুরের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। গড়ে তোলা যাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্রহ্মপুত্রের এই সহজ নৌপথকে ঘিরে সারা জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

পাট গবেষণা উপকেন্দ্র প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পাটের দিক থেকে এক সময় জামালপুর সারা বিশ্বে সুপরিচিত ছিল। এ জেলায় প্রচুর পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। পাটের সেই সোনালী ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দেশব্যাপী পাট শিল্পের প্রসারে বর্তমান সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যে জেলার সরিষাবাড়ীতে পাটের সবুজ চা উৎপাদন কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। মাদারগঞ্জে হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল মিল। পাট নিয়ে এ জেলায় অনেক প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই জেলায় একটি পাট গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। এটা জামালপুর জেলাবাসীর জন্য গর্বের ব্যাপার। পাটের উৎপাদন বাড়ানো এবং পাটশিল্পের উন্নয়নে এই গবেষণা কেন্দ্রটি বেশ কাজে দিবে।

উল্লেখ্য, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ৬৪টি জেলার মধ্যে ১০টি উন্নত জেলার তালিকায় জামালপুর জেলাকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে জামালপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বেশ কয়েকটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দুটি ইপিজেড, তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ, কামালপুর স্থলবন্দরের আধুনিকায়ন, তিনটি বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ সারা জেলায় প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। সর্বশেষ একনেকে অনুমোদন পেয়েছে ‘ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট প্রকল্প’। এই ইনস্টিটিউট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৮১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্প কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিমাসেই যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প।