দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ইজিবাইকচালকের লাশ উদ্ধার

নিহত ইজিবাইক চালক রবিউলের লাশের পাশে তার মায়ের আহাজারি। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, দেওয়ানগঞ্জ ॥
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মাদক মামলার আসামি এক ইজিবাইকচালকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তায় দেওয়ানগঞ্জ থানার কাছেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ওই ইজিবাইকচালক রবিউল ইসলাম আপেলের (২৬) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার প্রতিবাদে তাকে নির্যাতন করে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে নদীতে ফেলে দিয়ে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ১০ সেপ্টেম্বর সকালে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করে। নিহত রবিউল উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের লিয়াকত আলী টুনুর ছেলে। রবিউল তিনটি মাদক মামলাসহ পাঁচটি মামলার আসামি এবং ভয়ে পালিয়ে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে দেওয়ানগঞ্জ থানার সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করছিল। রাত সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ রবিউলকে ইজিবাইকসহ আটক করে। এ সময় রবিউল ইজিবাইক রেখেই দৌঁড়ে দেওয়ানগঞ্জ বাজারের দিকে গেলে স্থানীয়রা তাকে চোর সন্দেহে ধাওয়া করলে থানার কাছেই ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয় রবিউল।

এ ঘটনা রাতেই জানাজানি হলে নিহতের স্বজনরা লাশ ভেসে উঠার আশায় সারারাত ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অপেক্ষা করেন। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের কর্মীরা ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে রবিউলের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পরপরই এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শত শত জনতা দেওয়ানগঞ্জ থানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং রাস্তা অবরোধ করে। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খবর পেয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য রবিউলের লাশ জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

এদিকে নিহতের শোকার্ত মা রাহেলা বেগম অভিযোগ করে বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘আমার পোলা কোনো দোষ করে নাই। ও অটো চালাইয়া সংসার চালায়। আমার পুলাডারে পুলিশ আর মাইসনে মাইরা নদীতে ফালাই দিছে। আমার পুলাডারে অরা মারলো ক্যান। আমি বিচাই চাই।’

দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. লুৎফর রহমান বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘চেকপোস্টে আমরা সঙ্কেত পাই যে একটি ইজিবাইকে মাদক বহন করা হচ্ছে। রবিউলের ইজিবাইক থামিয়ে তল্লাশি করে কোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই সে ইজিবাইক রেখে দেওয়ানগঞ্জ বাজারের দিকে দৌঁড় দেয়। তার এক ঘন্টা পর খবর পাই যে তাকে চোর সন্দেহে স্থানীয়রা ধাওয়া করলে সে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিয়েছে। রাতে খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। ১০ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। তখন তার কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সাধারণ ডায়েরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছে, নিহতের স্বজনদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাকে কোনো নির্যাতন করেনি। ভয়ে দৌঁড় দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সে মারা গেছে।’