ঝিনাইগাতীর সেই ভিক্ষুক পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার

ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সেই ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনকে উপহার হিসাবে বাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ দেয়া হবে একটি মুদি দোকান। সেই সাথে ২২ এপ্রিল দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজণীগন্ধায় তাকে (নজিমুদ্দিন) দেওয়া হয়েছে সংবর্ধনা। ২১ এপ্রিল বিকালে কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে গত দুই বছরের সঞ্চয়ের ১০ হাজার টাকা দান করেন ওই ভিক্ষুক। নিজের ভাঙা বসত ঘর মেরামত করার জন্য ভিক্ষা করে ওই টাকা তিনি জমিয়েছিলেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এরপরই তিনি প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও রুবেল মাহমুদকে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রাতেই ভিক্ষুক নজিমউদ্দীনের বাড়ি যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তার জন্য খোলা করোনা তহবিলে ভিক্ষুক নজিমউদ্দীন ১০ হাজার টাকা দান করেন। পরে এ সংবাদটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। আর এ সংবাদটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এর পরপরই ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে ওই ভিক্ষুকের জন্য বাড়ি ডিজাইন এবং প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠানোর জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেবে সরকার।

তিনি আরও বলেন, নজিমউদ্দীনের বসতভিটার কাগজপত্র দেখা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায় তার জমির কাগজ নিষ্কণ্টক নয়। তাই তাকে উপজেলা শহরের নিকটবর্তী সরকারি খাস জমি থেকে ১২শতাংশ জমি দেওয়া হবে। আর একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের জীর্ণ বসতঘর। ছবিটি ২২ এপ্রিল সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ বি এম এহসানুল মামুন বলেন, ভিক্ষুক নজিমউদ্দীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মুদি দোকান দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দী হয়ে পড়া কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ১৯ এপ্রিল ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মামুদের নির্দেশে খাদ্য সহায়তার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি প্যাসিফিক ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা কর্মহীন অসহায় দরিদ্র মানুষদের তালিকা প্রণয়নে গান্ধীগাঁও গ্রামে যান। এ সময় ভিক্ষুক নজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইউএনর’র পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান তারা। ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন ওই তালিকায় তার নাম না ওঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। এবং বলেন, নিজের বসত ঘর মেরামত করার জন্য গত দুই বছরে ভিক্ষা করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। এ টাকা স্বেচ্ছায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায়দের খাদ্য সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে দান করতে চান তিনি। পরে ২১ এপ্রিল ওই ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে ইউএনও’র হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন নজিমুদ্দিন। নজিমুদ্দিনের বাড়ি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামে। সে ওই গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে।