দেশে প্রথম পানিফল বা সিঙ্গারা চাষ শুরু হয় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। অল্প সময় ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে স্থানীয় কৃষকেরা। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পতিত জমিতে পানিফল চাষে এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। এতে করে স্থানীয় কৃষকদের ভাগ্য চাকা ঘুরছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পরিত্যক্ত ৪০ হেক্টর জলশায়ে পানিফল উৎপাদন হয়েছে ৩২০ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে আট মেট্রিক টন। এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে প্রতি টনের দাম ৩৩ হাজার টাকা। সেই হিসাবে এবার এক কোটি পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকার পানিফলের চাষ হয়েছে।
বর্তমানে কাঁচা পানিফল ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, পাকা পানিফল প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে পানি ফল চাষ শুরু করছেন।
বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফল। পানিফল গাছ পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পানির নীচে মাটিতে শিকড় থাকে। পানির উপর পাতা ভাসতে থাকে। বিভিন্ন পতিত ডোবা, খাল, পুকুরের অল্প পানিতেই পানিফল চাষ করা যায়।
স্থানীয় রামপুরা এলাকার পানিফল চাষী ফজলু মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘায় ১৬ থেকে ১৮ মণ করে পানিফলের ফলন হয়েছে। সাত বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছেন তিনি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সাত বিঘা জমি থেকে প্রায় ১৩২ মণ পানিফল বিক্রি করেছেন।
ডালবাড়ী এলাকার কাসেম আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করে ৩০ মণ পানি ফল পেয়েছি। এতে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। অল্পপুঁজি ব্যয় করে লাভও বেশি হয়। খেতেও সুস্বাদু।

বালু গ্রামের বধু মিয়া বলেন, দুই বিঘা জমিতে পানি ফলের চাষ করে এ পর্যন্ত ২০ মণ উঠিয়েছি। বিক্রি করে ২৪ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। আরও উঠানো বাকি আছে। আশা করি আরও ১৫ মণ পানি ফল উঠাতে পারব। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এই ফল চাষে বর্তমানে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেক হতদরিদ্র পরিবার। প্রতিদিন সকালে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পেছনে পানিফলের বাজার বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারিরা এসে পানিফল নিয়ে যান।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ রতন মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যেকোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। এবার বন্যার প্রবণতা কম থাকায় পানিফল চাষের আগ্রহ পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
বিল্লাল হোসেন মন্ডল : নিজস্ব প্রতিবেদক, দেওয়ানগঞ্জ, বাংলারচিঠিডটকম 















