জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৩টি সমবায় সমিতির প্রায় ৩২ হাজার গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে গ্রাহকদের টানা আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে সরকারি দপ্তরগুলোর কার্যক্রম। ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মত সমিতির গ্রাহকেরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন।
এতে সরকারি দপ্তরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে কয়েক হাজার ভুক্তভোগী গ্রাহক অংশ নেন। ঘেরাও কর্মসূচির কারণে সরকারি দপ্তরের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাধারণ সেবাগ্রহীতারাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। একই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তারা বিরতিহীনভাবে ঘেরাও চালিয়ে যাবেন। ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে এবং ১৭ নভেম্বর, রবিবার থেকে আবার শুরু হবে।
জানা গেছে, উচ্চ মুনাফার আশায় ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৭২০ কোটি টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩২ হাজার গ্রাহক। প্রথম দিকে সমিতিগুলো মুনাফা দিয়েছে। তবে ২০২২ সালের শেষের দিকে আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে পরিচালকরা আত্মগোপনে চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুর আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা সমবায় কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাননি তারা।
উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, টানা তিনদিন ধরে তারা অফিসে যেতে পারছেন না। ফলে কোন দাপ্তরিক কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে না। ১৩ নভেম্বর সকালে অফিসে গেলেও উপজেলা পরিষদ ভবনের ফটকে সমবায় সমিতির গ্রাহকেরা অবস্থান নেয়ায় তারা ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে পরিস্থিতি অনকূলে না থাকায় বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, নতুন ভোটার হয়েছি। কিন্তু অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড পাচ্ছি না। তাই দু’দিনের ছুটি নিয়ে কার্ড নিতে এসেছি। গতকালও এসে দেখি অফিসে তালা ঝুলছে। আজও একই অবস্থা। গার্মেন্টসে আইডি কার্ড জমা দিতে না পারলে চাকরি হারাতে হবে।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ে আসা মিজানুর রহমান বলেন, জমির দলিলের নকল নিতে এসেছি। দেখি সব বন্ধ। সব অফিস তালামারা। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। দ্রুত এর সমাধান করা দরকার।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আসা বৃদ্ধা সাজেদা খাতুন ও আমেনা বেওয়া বলেন, অসুস্থ মানুষ, টাকা-পয়সা নেই। সমাজসেবা অফিস থেকে ওষুধ নিতে এসেছি। তিনদিন ধরে ঘুরছি। খালি দেখি অফিস বন্ধ। এই অফিস থেকে হাজার-বারো ‘ টাকার ওষুধ দেয়।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহবায়ক শিবলুল বারী এ প্রতিবেদককে বলেন, আন্দোলন ছেড়ে কেউ বাড়ি ফিরবে না। শত শত মানুষ অংশ নিচ্ছে। তবে প্রশাসন এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। সমিতির পরিচালকদের গ্রেপ্তার ও গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ এ প্র্রতিবেদককে বলেন, আন্দোলনকারীরা তৃতীয় দিনের মত উপজেলা পরিষদ ঘেরাও রেখেছেন। ফলে সব সরকারি দপ্তরের কাজ বন্ধ রয়েছেন। তবে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা চলছে।
খাদেমুল ইসলাম : নিজস্ব প্রতিবেদক, মাদারগঞ্জ, বাংলারচিঠিডটকম 















