হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, আমার সাথে অনেকেই দেন দরবার করতে চান, ব্যক্তিগতভাবে এমপি হবার অফার দেন, হয়তো মন্ত্রী হওয়ার কথা বলেও প্রস্তাব দিবেন। কিন্তু মনে রাখবেন আমরা এমপি মন্ত্রী হবার জন্য রক্ত দেই নাই। আমার সন্তানদের রক্ত নিয়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না। আমরা চেয়েছি দেশে ইসলামের অধিকার। দেশ ও জাতির স্বার্থে ইসলাম বাস্তবায়িত হবে এ প্রশ্নে কারো সঙ্গে আপোষ নাই।
১৫ অক্টোবর, বুধবার রাতে শেরপুর পৌর পার্কে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শানে রিসালাত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলাম শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতি খালিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আল্লামা খালেদ সাইফুল্লা, মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ, আল্লামা বশিরুল্লাহ মুফতি মুহিবুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মালানা আজিজুল হক, মুফতি রফিকুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।
আল্লামা মামুনুল হক বলেন, আমাদের কোরআনকে কেউ অবমাননা করবে না। এই নিরাপত্তাটুকু চেয়েছিলাম। মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করবে না। এই তো আমাদের প্রত্যাশা ছিল। এই তো ছিল আমাদের দাবি।
তিনি বলেন, আল্লাহর নবীর ইজ্জতের উপর আঘাত আনা যাবে না। আমাদের এই দাবি এটা কী কোন অযৌক্তিক দাবি। এটা শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানদের হৃদয়ের দাবি। এটা এমন দাবি এ ব্যাপারে কার সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ নাই। আমাদের হৃদয়ের এই ব্যথা সেই সরকার বুঝতে পারেনি। বুঝার চেষ্টা করে নাই। বরং যারা আল্লাহর নবীর ইজ্জতের হেফাজতের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান মৃত্যুদণ্ডের দাবি নিয়ে শাপলা চত্বরে গিয়েছিল। তাঁদের মৃত্যুদন্ড চাওয়ার এই অপরাধে জালিমের বুলেটের আঘাত, হেলমেট লীগ, হাতুড়ি লীগ, গুন্ডা লীগ, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সবাই মিলে সেদিন গোটা মতিঝিল থেকে টিকাটুলী এবং প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে কমলাপুর পর্যন্ত গোটা শহরে আওয়ামী গুন্ডারা নিজের হাতে অস্ত্র নিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র নবী প্রেমিক তৌহিদী জনতাকে জবাই করে এবং গুলি করে হত্যা করেছে।
এভাবে খুন করে, হত্যা করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলল শাপলা চত্বরে কোন মানুষ মারা যায়নি। আমাদের শহীদরা নাকি বুকে রং মেখে শুয়েছিল। আমাদের শাহাদাতপ্রাপ্ত ভাইদের রক্ত নিয়ে উপহাস করা হয়েছিল। এভাবে একটার পর একটা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের উপর। অপবাদ দেওয়া হয়েছে নবীপ্রেমী তৌহিদী জনতার উপর।
আওয়ামী দুুঃশাসনে এবং শাপলা চত্বরে তাদের হত্যাযজ্ঞের শিকার ৮৩ জন হেফাজতে ইসলামের বীর শহীদ। শহীদের সকল পরিচয়সহ আমরা বিস্তারিত জাতির সম্মুখে উন্মোচন করেছি।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে আমরা ৫৮ জন যাদের পরিচয় আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের শাপলাচত্বর থেকে যাত্রাবাড়ি এবং সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আর অসংখ্য অগণিত বীর শহীদদের লাশ গুম করা হয়েছে। যাদের লাশগুলো ময়লার গাড়িতে করে ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলা হয়েছে। তাদের জানাজা পড়তে দেওয়া হয়নি। তাদের আপনজনকে লাশ স্পর্শ করতে দেওয়া হয়নি। এই লাশগুলোর খোঁজ আজও পর্যন্ত আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। এটা পাওয়ার কোন সুযোগও নাই। কারণ এই লাশগুলোর কোন সূত্র বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার রেখে যায়নি। এর সমস্ত সূত্র এবং প্রমাণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
মামুনুল হক বলেন, প্রাইমারি স্কুলগুলোতে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগের যে সার্কুলার অথবা যে সরকারি গেজেট প্রকাশ হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশি চালাকি করতে যাবেন না। আমাদের ধর্ম উপদেষ্টা দিয়ে আপনারা জানালেন এ মুহূর্তে গানের শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। আমরাও জানি এ মুহূর্তে কোন সুযোগ নাই। আপনারা যে গেজেট প্রকাশ করেছেন তা প্রত্যাহার করবেন কীনা তা জানান।
তিনি বলেন, আপনারা গানের শিক্ষক নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করতে পারেন। আমাদের কলিজার টুকরা আল কোরআন ও ইসলামের ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করতে আপনাদের হাতে তখন পায়খানার কুলুপ এঁটে বসে। কাকে খুশি করার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। এদেশে গানের শিক্ষার বইয়ের নামে সমস্ত শিরকি হিন্দুদের মূর্তির ছবি নিয়ে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাইমারি এবং হাইস্কুলে শিরক ও হিন্দুত্ববাদে দীক্ষিত করার পাঁয়তারা করার চেষ্টা করবেন। আমার মুসলমান সন্তানদের ঈমান হরণ করার চেষ্টা করবেন আর আমরা মুখে আঙুল দিয়ে চুষবো। আমাদের এত অকর্মণ্য ভাবলে ভুল করবেন।
তিনি এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রাইমারি স্বুলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমাদের রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লব আর সেই বিপ্লবের ফলে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। বিপ্লবের এই চেতনা, বিপ্লবীদের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য হলেও প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আর যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ভাল কথা। কিন্তু আগামী দিনে ক্ষমতায় এসে ইসলামের জন্য কী করবেন। যারা আল্লাহর নবী ও কোরআন নিয়ে কটূক্তি করে তাদের ব্যাপারে কি শাস্তি দিবেন সেগুলো আগে জাতির সামনে তুলে ধরবেন। পরে সব দেন দরবার হবে।
সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহবায়ক আইনজীবী মো. সিরাজুল ইসলাম, শেরপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. হাফিজুর রহমানসহ সর্বস্তরের আলেম ওলামাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মুগনিউর রহমান মনি : নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম 



















