ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মাদারগঞ্জে ১৮ ঘণ্টা পর আরেক শিশুর মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ৪, নিখোঁজ ১ জামালপুরে মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত মাদারগঞ্জে জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপিত বকশীগঞ্জে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কর্মসূচি শুরু এপেক্স ক্লাব অব শেরপুরের ৩য় এজিএম ও ক্লাব বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত পাররামরামপুর ইউনিয়নে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত মাদারগঞ্জে বৃক্ষরোপণ, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা ইসলামপুরে অসময়ে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা আখচাষীরা শেরপুরে শেষ হলো ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্তদের ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব সরিষাবাড়ীতে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের উপর হামলা

দুই হাত নেই, চায়ের দোকানি অদম্য নিহালের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

মাদারগঞ্জ : নিজের চায়ের দোকানে চা বানাতে ব্যস্ত অদম্য নিহাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জীবনে চলার পথে প্রতিকূলতা যতই আসুক, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে মানুষ হারে না- এই কথার বাস্তব উদাহরণ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ গ্রামের তরুণ মেহেরাব হোসাইন নিহাল।

তিন বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় কনুই পর্যন্ত দুই হাত হারিয়ে ফেললেও থেমে যাননি তিনি। প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই স্থানীয় বাজারে খুলেছেন ছোট একটি চায়ের দোকান। সেখান থেকেই চলছে তার মা, স্ত্রীসহ তিন সদস্যের সংসার। ছোট্ট সেই দোকান এখন শুধু জীবিকার উৎস নয়। তার আত্মসম্মান আর জীবনের জয়গানও বটে।

২৩ বছর বয়সী নিহালের গল্প যেন এক অনুপ্রেরণার অধ্যায়। টাঙ্গাইলের মৃত সুলতান আহম্মেদের ছেলে নিহাল। শৈশবে বাবাকে হারিয়ে মা খাদিজাতুল কুবরাকে নিয়ে নানা বাড়ি মাদারগঞ্জের মোসলেমাবাদ গ্রামে চলে আসেন। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই বড় হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে একদিন পরিবারের ভাগ্য বদলাবেন। কিন্তু ২০২২ সালে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

মাদারগঞ্জ : নিজের চায়ের দোকানে কাজে ব্যস্ত বানাতে ব্যস্ত অদম্য নিহাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের নাদাগাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ওয়ারিংয়ের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন নিহাল। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয় দুই হাত। তখন তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একমাত্র ছেলের এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়েন মা খাদিজাতুল কুবরা।

কিন্তু হাল ছাড়েননি নিহাল। চিকিৎসা শেষে এক বছর পর প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই জোরখালী এনপুর বাজারে খুলে বসেন ছোট্ট চায়ের দোকান। হাত না থাকায় কনুইয়ের সাহায্যে কেতলি ধরেন। চা বানান। হাসিমুখে চা পরিবেশন করেন গ্রাহকদের। বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে তার মা এখনও কোন সরকারি সহায়তা পাননি।
নিহাল বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত হারিয়ে ভেবেছিলাম জীবন শেষ। কিন্তু আল্লাহ আমাকে হয়ত কোন কারণেই বাঁচিয়ে রেখেছেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারও কাছে হাত পাতব না। দুই হাত নেই। কিন্তু মনোবল আছে। এই দোকানই এখন আমার জীবনের সম্মান।

স্থানীয় বাসিন্দা সোলাইমান বলেন, নিহাল খুব পরিশ্রমী ছেলে। দুর্ঘটনার পরও হাল ছাড়েনি। নিজের মত করে জীবনের নতুন পথ তৈরি করেছে।

নিহালের মা খাদিজাতুল কুবরা বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি আগেই। একমাত্র ছেলেও দুই হাত হারিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেটা হার মানেনি। নিজের পরিশ্রমেই সংসার চালাচ্ছে। এতে আমি গর্বিত।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করে নিহাল যে জীবনযাপন করছেন তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। বরাদ্দ পাওয়া গেলে তার মাকেও বিধবা ভাতার আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহাল প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোন প্রতিবন্ধকতাই জীবনের পথে বাধা নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তার মত অদম্য মানুষদের সহায়তায় সব সময় প্রস্তুত।

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারগঞ্জে ১৮ ঘণ্টা পর আরেক শিশুর মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ৪, নিখোঁজ ১

দুই হাত নেই, চায়ের দোকানি অদম্য নিহালের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

আপডেট সময় ১০:৪৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

জীবনে চলার পথে প্রতিকূলতা যতই আসুক, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে মানুষ হারে না- এই কথার বাস্তব উদাহরণ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ গ্রামের তরুণ মেহেরাব হোসাইন নিহাল।

তিন বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় কনুই পর্যন্ত দুই হাত হারিয়ে ফেললেও থেমে যাননি তিনি। প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই স্থানীয় বাজারে খুলেছেন ছোট একটি চায়ের দোকান। সেখান থেকেই চলছে তার মা, স্ত্রীসহ তিন সদস্যের সংসার। ছোট্ট সেই দোকান এখন শুধু জীবিকার উৎস নয়। তার আত্মসম্মান আর জীবনের জয়গানও বটে।

২৩ বছর বয়সী নিহালের গল্প যেন এক অনুপ্রেরণার অধ্যায়। টাঙ্গাইলের মৃত সুলতান আহম্মেদের ছেলে নিহাল। শৈশবে বাবাকে হারিয়ে মা খাদিজাতুল কুবরাকে নিয়ে নানা বাড়ি মাদারগঞ্জের মোসলেমাবাদ গ্রামে চলে আসেন। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই বড় হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে একদিন পরিবারের ভাগ্য বদলাবেন। কিন্তু ২০২২ সালে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

মাদারগঞ্জ : নিজের চায়ের দোকানে কাজে ব্যস্ত বানাতে ব্যস্ত অদম্য নিহাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের নাদাগাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ওয়ারিংয়ের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন নিহাল। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয় দুই হাত। তখন তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একমাত্র ছেলের এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়েন মা খাদিজাতুল কুবরা।

কিন্তু হাল ছাড়েননি নিহাল। চিকিৎসা শেষে এক বছর পর প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই জোরখালী এনপুর বাজারে খুলে বসেন ছোট্ট চায়ের দোকান। হাত না থাকায় কনুইয়ের সাহায্যে কেতলি ধরেন। চা বানান। হাসিমুখে চা পরিবেশন করেন গ্রাহকদের। বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে তার মা এখনও কোন সরকারি সহায়তা পাননি।
নিহাল বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত হারিয়ে ভেবেছিলাম জীবন শেষ। কিন্তু আল্লাহ আমাকে হয়ত কোন কারণেই বাঁচিয়ে রেখেছেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারও কাছে হাত পাতব না। দুই হাত নেই। কিন্তু মনোবল আছে। এই দোকানই এখন আমার জীবনের সম্মান।

স্থানীয় বাসিন্দা সোলাইমান বলেন, নিহাল খুব পরিশ্রমী ছেলে। দুর্ঘটনার পরও হাল ছাড়েনি। নিজের মত করে জীবনের নতুন পথ তৈরি করেছে।

নিহালের মা খাদিজাতুল কুবরা বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি আগেই। একমাত্র ছেলেও দুই হাত হারিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেটা হার মানেনি। নিজের পরিশ্রমেই সংসার চালাচ্ছে। এতে আমি গর্বিত।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করে নিহাল যে জীবনযাপন করছেন তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। বরাদ্দ পাওয়া গেলে তার মাকেও বিধবা ভাতার আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহাল প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোন প্রতিবন্ধকতাই জীবনের পথে বাধা নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তার মত অদম্য মানুষদের সহায়তায় সব সময় প্রস্তুত।