গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেছেন, গত চুয়ান্ন বছর আগে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করেছিল তা সফল করতে পারেনি। যার জন্য আমরা আজকে নতুন করে বাংলাদেশকে কিভাবে সাজাব সেইটা পরিকল্পনা করছি।
১৩ জুন, শুক্রবার রাতে জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মধ্য জালালেরপাড়া ঈদগাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামালপুর-৫ সদর আসনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন মুক্তি-সংগ্রামের মহানায়ক যার ঘোষণায় সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর এখানে অবদান আছে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডারের দ্বায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি এই রক্তক্ষয়ী লড়াই সংগ্রাম করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন।
রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, সেই পরিকল্পনা থেকে আমি আজকে আমার নিজ এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে মতবিনিময় সভা করব এবং দোয়া ও সমর্থন চাইব। যদি তারা আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করব ইনশাআল্লাহ। আপনারা জানেন বাংলাদেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। আমরা তাদের সঙ্গে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকারকে বিদায় করেছি এবং পালাতে বাধ্য করেছি। শুধু তিনি একা নন এমপি-মন্ত্রীসহ মসজিদের ইমামও এদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এইটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমরা যে মাঠে আন্দোলন করেছি তা জনগণ জানে। এই আন্দোলনে আমার ভূমিকা ছিল একটু বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন পর আমার নিজ এলাকার সর্বস্তরের জনগণের সাথে পরিচিত হব এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ সদর আসন থেকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভা করার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছি। যদি সবাই সমর্থন করে তাহলে আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা জানেন গত ১৬টি বছর ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করেছিল সেই অবসান কল্পে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চসহ কয়েকটি দল মানুষের মণিকোঠায় অবস্থান করছি। সেই বিশ্বাস আমার আছে। আমাদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হওয়ার ফলে নতুন করে বাংলাদেশকে সাজানোর একটা পরিকল্পনা আমাদের মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপিসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দল আমরা এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে মাঠে আছি। এই ৩১ দফা এটাও সংস্কারের একটি অংশ বলে আমি মনে করি। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ যখন আন্দোলন শুরু করেছিলাম তখন বলেছিলাম সরকার ও শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বারবার যেন ফ্যাসিস্ট সরকার আসতে না পারে। ফ্যাসিবাদি কায়দা যেন এখানে আবার শুরু হতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমরা সেদিন সরকারের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করি এবং রাজপথে লড়াই করি। সেই আন্দোলনে দুই হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হয় এবং বিশ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়। এই আন্দোলনে আমি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এভাবেই আমরা রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তুলেছি। এখন আমরা মানুষের কাছে আসছি এবং আমরা গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যত গণহত্যা হয়েছে তার বিচার আমরা করব। গত চুয়ান্ন বছর যেভাবে দেশ চলেছে সেই ভাবে আর দেশ চলতে দেওয়া যাবেনা। যার কারণে আমরা সংস্কারের কথা বলছি। আমরাই বাংলাদেশে প্রথম সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে আসি। আমাদের নেতা ডাক্তার জাফর উল্লাহ চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, উনারাই এই সংস্কার প্রস্তাবের প্রবক্তা। এই সংস্কার প্রস্তাব এখন সারা বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারটাও হওয়া দরকার এবং তারই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনটাও হওয়া দরকার। কারণ এখন যে সরকার রয়েছে তিনি একটা ভোটারবিহীন সরকার। রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে আমরা এখন রাজপথে আছি। আমরা এই নিবার্চনের মধ্য দিয়ে জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে যাবো এবং জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সামনে নির্বাচন দেওয়া দরকার। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি আমার এলাকায় এসেছি। আমি দীর্ঘদিন পর এই গ্রামে এসেছি। আল্লাহর কাছে আমি শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জানাই যে এই এলাকার সর্বস্তরের জনগণ আমাকে বলছে নির্বাচন করার জন্য। তাই আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করব। আমাকে যদি আমার এলাকার জনগণসহ সদরবাসী সাপোর্ট করে অবশ্যই আমি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো ইনশাআল্লাহ। আমি নির্বাচিত হলে সমাজে চাঁদাবাজি, মাদক, লুটতরাজ, প্রতিষ্ঠান ও বালুঘাট দখল এসব বন্ধ করার বিষয়ের উপর বেশি নজর দিব। এখানে কোন প্রকার চাঁদাবাজি ও লুটতরাজ, প্রতিষ্ঠান দখল করা চলবে না। এটাই হবে আমার মূল কাজ। পাশাপাশি আমার এলাকার উন্নয়নের জন্য এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত করব ইনশাআল্লাহ।

বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে ও আইনজীবী আল আমিন রিয়াদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. আমীর উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী তাজউদ্দিন সবুজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান তালুকদার বাদল, ভাসানী জনশক্তি পার্টি জামালপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব মাহবুবুর আলম দিপু, বিশিষ্ট সমাজসেবক কামরুল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম শেখ, বিশিষ্ট সমাজসেবক বিদ্যুৎ হোসেন ভূইয়া, বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. আব্দুল হাকিম শেখ, বিশিষ্ট সমাজসেবক ওয়াজেদ আলী, কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফুর রহমান, দৈনিক পল্লী কন্ঠ প্রতিদিনের সম্পাদক জিয়াউল রাফি, বিশিষ্ট সমাজসেবক সাকিব আহাম্মেদ শিহাব প্রমুখ।
আলোচনা সভায় ভাসানী জনশক্তি পার্টি, মৌহডাঙ্গা, গোপালপুর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।