মা ও শিশুর উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পৌরসভার গাবেরগ্রাম এলাকায় তিন তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও পিয়ন কাম চৌকিদার দিয়ে চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম। ফলে বাধ্য হয়ে গর্ভবতী, প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিতে উপজেলা সদরে ছুটে যেতে হচ্ছে। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তি, অতিরিক্ত ব্যয় ও জীবনঝুঁকির পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানিও। স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালটি চালুর দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত আংশিকভাবে কার্যক্রম চলছে। জনবল নিয়োগ হলে সেবার পরিমাণ বাড়ানো যাবে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে দু’জন মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য পদ রয়েছে ১৪টি।এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি), ফার্মাসিস্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ফিমেইল মেডিক্যাল এ্যাটেনডেন্ট, ড্রাইভার, অফিস সহায়ক, আয়া, সুইপার, এমএলএসএসসহ ১২ পদ খালি রয়েছে। পিয়ন কাম চৌকদার প্রেষণে এই হাসপাতালে রয়েছেন।
আরও জানা গেছে, হাসপাতালের ভবনটিতে দুটি চিকিৎসকের চেম্বার, দুটি নার্স রুম, ফার্মেসি, ল্যাব, ওয়েটিং রুম, কাউন্সেলিং রুম, স্টোর রুম, খাবার সরবরাহ কক্ষ, অফিস কক্ষ ছাড়াও রোগীদের জন্য সাধারণ ওয়ার্ড, এসিসংবলিত অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুমসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষ রয়েছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয় না। তাই ওয়ার্ডে নেই কোনো শয্যা, অপারেশন থিয়েটারে নেই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে তিন তলাবিশিষ্ট ভবন আছে, প্রয়োজনীয় পরিমাণ আসবাবপত্র আছে, প্রচুর রোগীও আছে; চিকিৎসকদের জন্য আবাসিক ভবনও আছে। নেই শুধু চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্মিত হাসপাতাল উদ্বোধনের পর দীর্ঘ নয় বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। ফলে আধুনিক অবকাঠামোর এই হাসপাতালটি অনেকটা অকেজো এবং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আকলিমা খাতুন ও মনোয়ারা বেগম জানান, হাসপাতাল উদ্বোধনের পর তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি। এখানে কোন চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। রোগী ভর্তি, অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা না থাকায় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র মানুষের কোন কাজেই আসছে না।
গাবেরগ্রাম এলাকার দিপ্তি আক্তার বলেন, এই হাসপাতালে ডাক্তার থাকলে আমরা হাতের কাছেই সব চিকিৎসা পেতাম, ওষুধও পেতাম। বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় খরচ বাড়ে, সময় অপচয় হয়।
একই এলাকার ষাটোর্ধ্ব আনেছা বেগম বলেন, বাড়ির কাছে এত বড় হাসপাতাল, তাও বোলে ডাক্তার নাই। গরিব মানুষ টেহা নাই, সে জন্যি দূরে ডাক্তার দেখাবার যাইতে পারি না। এ হাসপাতালে ডাক্তার থাকলে এলা চিকিৎসা নিতে সুবিধা হইত।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডা. সুস্মিতা দত্ত এ প্রতিবেদককে জানান, গাবেরগ্রামের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকটে রয়েছে। সেখানে কোন চিকিৎসক নেই। তিনি কেন্দ্রটিতে সপ্তাহে একদিন চিকিৎসা সেবা দেন। এছাড়াও একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা তিনদিন রোগীদের সেবা প্রদান করেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, জনবল না থাকায় স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করে আংশিকভাবে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে প্রত্যাশিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।