ঢাকা ১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মাদারগঞ্জে একমণ ধানের দামেও মিলছে না একজন ধানকাটা শ্রমিক

মাদারগরঞ্জ : বোরো ধান কাটছেন শ্রমিকেরা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ফলনও হয়েছে ভাল। তবে হাসি নেই কৃষকদের মুখে। একমণ ধানের দাম দিয়েও পরিশোধ হচ্ছে না একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক।

কালবৈশাখী ঝড়ের আশষ্কায় দ্রুত পাকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিকদের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মজুরিও বেড়ে গেছে। ধান কাটার কাজে আসা শ্রমিকদের প্রতি জনকে এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকাসহ দিতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার। অথচ স্থানীয় বাজারে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকায়। ফলে ধান ঘরে তোলার শেষ মুহূর্তে শ্রমিক সংকটে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। প্রতিবছর ভুট্টার আবাদ বাড়ায় দিনদিন ধানের আবাদ কমছে। তবে এবার ধানের ভাল ফলন হয়েছে। হাইব্রিড জাতের ধান বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ করে। দেশিসহ অন্যান্য জাতের ধানের ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২০ মণ করে।

মাদারগরঞ্জ : পেকেছে বোরো ধান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরেজমিনে উপজেলার চরপাকেদহ ইউনিয়নের তেঘরিয়া, ফাজিলপুর, কড়ইচড়া ইউনিয়নের মহিষবাথান, ভাংবাড়ি, গুনারিতলা ইউনিয়নের গোপালপুর, জোনাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেতের ধান পেকেছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা।

গুনারিতলা ইউনিয়নের জোরখালী গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজারে ধানের দাম ৯৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০ টাকা মণ। কিন্তু একজন শ্রমিকের মজুরি এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। তিনবেলা খাবারসহ শ্রমিক প্রতি চাষিদের খরচ এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এক বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াইয়ে সাতজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি শ্রমিকের মজুরি খাদ্যসহ প্রায় আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ হয়। একই এলাকার কৃষক মোকাদ্দেস হোসেনও একই পরিস্থিতির বর্ণনা দিলেন।

ভাংবাড়ি এলাকার কৃষক জোবায়ের আহম্মেদ বলেন, জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, সার-কিটনাশক প্রয়োগ, নিড়ানি, সেচ, কাটা-মাড়াই-ঝাড়াই, পরিবহনসহ বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয় প্রায় ১৮ মণ থেকে ২০ মণ। ফলে বিঘা প্রতি কৃষককে প্রায় তিন-চার হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকট নিরসন এবং চাষিরা যাতে দ্রæত ধান কাটতে পারেন এজন্য কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জামালপুরে সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত করোনায় আক্রান্ত

মাদারগঞ্জে একমণ ধানের দামেও মিলছে না একজন ধানকাটা শ্রমিক

আপডেট সময় ০৭:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ফলনও হয়েছে ভাল। তবে হাসি নেই কৃষকদের মুখে। একমণ ধানের দাম দিয়েও পরিশোধ হচ্ছে না একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক।

কালবৈশাখী ঝড়ের আশষ্কায় দ্রুত পাকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিকদের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মজুরিও বেড়ে গেছে। ধান কাটার কাজে আসা শ্রমিকদের প্রতি জনকে এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকাসহ দিতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার। অথচ স্থানীয় বাজারে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকায়। ফলে ধান ঘরে তোলার শেষ মুহূর্তে শ্রমিক সংকটে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। প্রতিবছর ভুট্টার আবাদ বাড়ায় দিনদিন ধানের আবাদ কমছে। তবে এবার ধানের ভাল ফলন হয়েছে। হাইব্রিড জাতের ধান বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ করে। দেশিসহ অন্যান্য জাতের ধানের ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২০ মণ করে।

মাদারগরঞ্জ : পেকেছে বোরো ধান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরেজমিনে উপজেলার চরপাকেদহ ইউনিয়নের তেঘরিয়া, ফাজিলপুর, কড়ইচড়া ইউনিয়নের মহিষবাথান, ভাংবাড়ি, গুনারিতলা ইউনিয়নের গোপালপুর, জোনাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেতের ধান পেকেছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা।

গুনারিতলা ইউনিয়নের জোরখালী গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজারে ধানের দাম ৯৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০ টাকা মণ। কিন্তু একজন শ্রমিকের মজুরি এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। তিনবেলা খাবারসহ শ্রমিক প্রতি চাষিদের খরচ এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এক বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াইয়ে সাতজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি শ্রমিকের মজুরি খাদ্যসহ প্রায় আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ হয়। একই এলাকার কৃষক মোকাদ্দেস হোসেনও একই পরিস্থিতির বর্ণনা দিলেন।

ভাংবাড়ি এলাকার কৃষক জোবায়ের আহম্মেদ বলেন, জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, সার-কিটনাশক প্রয়োগ, নিড়ানি, সেচ, কাটা-মাড়াই-ঝাড়াই, পরিবহনসহ বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয় প্রায় ১৮ মণ থেকে ২০ মণ। ফলে বিঘা প্রতি কৃষককে প্রায় তিন-চার হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক সংকট নিরসন এবং চাষিরা যাতে দ্রæত ধান কাটতে পারেন এজন্য কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।