জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ১৫ দিনে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে কয়েকশ বসতভিটা, আবাদি জমি, মসজিদ, স্কুল, মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীপাড়ের মানুষ।
বিগত বছরগুলোতে যমুনা নদীতে বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে ভাঙন দেখা যায়। গত কয়েক দিনের ভাঙনে চরডাকাতিয়া গ্রামের অন্তত ১৫টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। ভাঙনের মুখে এখন রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, আবাদি জমি, চরডাকাতিয়াপাড়া জামে মসজিদ, চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নদী থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থান করছে চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরডাকাতিয়া গ্রাম জামে মসজিদ।
যমুনা নদীর ভাঙনে চরডাকাতিয়া গ্রামের দুই শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশ’ বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু বিগত সময়ে ভাঙনরোধে সরকারিভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম এলেই যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হলকারচর, কেল্লাকাটা, ডাকাতিয়াপাড়া সম্পূর্ণ এবং বড়খাল, বওলাতলী , চরডাকাতিয়াপাড়া ও খোলাবাড়ী এলাকার অধিকাংশ। ভিটেমাটি আবাদিজমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ওই সব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এক সময় যাদের সব ছিল আজ তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে। রেলের সরকারি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
চরডাকাতিয়া গ্রামের আফরোজা বেগম বলেন, যমুনা নদী চরডাকাতিয়া গ্রামে যে হারে ভাঙছে চলতি বছরে সমস্ত গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙনের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে চরডাকাতিয়া নামের একটি বড় গ্রাম। ভিটামাটি আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে হাজারও মানুষ। অসময়ে ভাঙনের ফলে আতঙ্কে এখন নদীপাড়ের মানুষ। আমাদের রাত কাটে নির্ঘুম। বসতভিটা ভেঙে নিলে আমাদের মাথাগুঁজার ঠাঁয়টুকুও থাকবে না। পরিবার পরিজন নিয়ে পথে দাঁড়াতে হবে।
চরডাকাতিয়া গ্রামের (হাজারী গ্রাম) ময়নাল হক বলেন, এ পর্যন্ত যমুনা নদী সাত বার ভেঙেছে আমার বাড়ি। আবাদি জমি ছিল তা-ও ভেঙে নিয়েছে। এ বছর ভাঙনের কবলে পড়ে শেষ রক্ষা হয়নি বসতভিটা ভেঙে নিয়েছে। এখন আমি অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। আমার মতো কয়েক শত মানুষ যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে। এ বছর জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাতে কাজ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে অযথা সরকারি অর্থ অপচয় না করে বড়খাল থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত স্থায়ী নদী শাসনের দাবি তার।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে ওই স্থানে এগারো হাজার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। ২১ এপ্রিল সোমবার নাগাদ সাড়ে ছয় হাজার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে বলে জানিয়েছেন পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। তবে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে না বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। তাদের ধারণা, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের মাত্রা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তখন ভাঙনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। জরুরি ভিত্তিতে ফেলা জিও ব্যাগ স্রোতে ভেসে গিয়ে আগের মতো সর্বত্র ভাঙন দেখা দিবে। সে কারণে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। জুরুরী ভিত্তিতে এখানে ভাঙন রোধে স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই স্থানে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আপাতত নেই। ওই স্থান নিয়ে একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেটা শেষ হলে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সেটা সময় সাপেক্ষ। আপাতত ভাঙনরোধে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।