ঢাকা ০৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতা চর্চায় মির্জা সাহেব ও তার ‘সাপ্তাহিক তওফিক’ বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র পুরো সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার : জয়নুল আবদীন ফারুক পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ১৬০ বছরের ইতিহাসে পুলিশ এত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি : পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম হাটচন্দ্রায় মাকে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার ইসলামপুরে এক মাদরাসা শিক্ষক বহিষ্কার গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমানো হয়েছে : রিজওয়ানা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে চান নেতানিয়াহু, ট্রাম্পের না গাজা উপত্যকায় গত দিনে ইসরাইলি হামলায় ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত

চৈত্রসংক্রান্তি : কিছু লোকাচার লোকবিশ্বাস

আজ চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা বছরের শেষ দিন। বছর শেষ ও নতুন বছরের আগমনের এই দিন বাঙালির কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যমুনা অববাহিকা অঞ্চলে এই দিনে কিছু লোকাচার ও লোকবিশ্বাস নিয়ে কথা বলবো আজ।

শত শত বছর ধরে বাঙালি সমাজে চৈত্র সংক্রান্তি দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বী চড়কপূজা করে থাকে। নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তি পালন করা হয়। এই চৈত্রসংক্রান্তির দিনই হিন্দু ধর্মের সব থেকে প্রধান উৎসব পূজা। একটি লম্বা কাঠকে চড়ক গাছ হিসেবে পূজো করা হয়। এই চড়কগাছে একজন ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর পিঠে, হাতে, পায়ে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জ্বলন্ত বাণ শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিও প্রচলিত রয়েছে। তবে এখনকার দিনে এই প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কোন কোন স্থানে এখনো চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এই নিয়ম বন্ধ করে দেয়। জামালপুর অঞ্চলে কোথাও কোথাও এখনও তা প্রচলিত আছে। চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনে কোন তীর্থক্ষেত্রে স্নান করলে অক্ষয় পুণ্য লাভ হয় বলে হিন্দু প্রথায় বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও এই দিন স্নানের পর প্রবীণ মানুষদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে মঙ্গল হয় বলে লোক বিশ্বাস রয়েছে। এ সময় বিভিন্নস্থানে শিব গাজনের মেলা বসতো।

লোকায়িত বাংলার বাঙালি সমাজে বৃষ্টির প্রার্থনায় হুতুম পোতা নামের একটি লোক বিশ্বাস আজও গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। তা হলো, একটি কচি কলা গাছ সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে এবং তার ভিটি তৈরি করে কাদামাটি দিয়ে লেপ দিয়ে কালি, সিঁদুর, চুন দিয়ে নানান আলপনা আঁকতে হয়। পরে তার সামনে তিনটি গর্ত করে তাতে দুধ, আতপ চাল, সিঁদুর দিয়ে ভরে চারিদিকে নানান বুনো ফুল দিয়ে গাছটিকে সাজাতে হয়। পরে পাটের আঁশ কালো রং করে অথবা কচুরিপানা শিকড় লম্বা করে চুল তৈরি করে কলা গাছটিকে সাজিয়ে তুলে, এসময় ছেলে মেয়েরা নানান গীত গায়। এবং তারা গীত শেষে সারা শরীর কালিতে মেখে ওই কালা গাছটিকে তুলে বাঁশের কুলা বা ডালাতে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল ডাল মসল্লা সংগ্রহ করে।

বৃষ্টির প্রার্থনায় নানান লোক ছড়া বা গীত গাইতে থাকে। পরে তাদের সংগ্রহের চাল ডালে খিচুড়ি রান্না করে কলা গাছের হুতুমটিকে নদীর পানিতে বিসর্জন দিয়ে গোসল করে আসে। এবং সবাই মিলে খিচুড়ি খেয়ে উৎসব শেষ করে। তাদের বিশ্বাস এই রীতি পালন করলে নাকি অনাবৃষ্টির এলাকায় বৃষ্টি নামবে। এই লোক বিশ্বাস শত শত বছর ধরে চলে আসছে। যমুনা অববাহিকা অঞ্চলে এখনো এই উৎসব পালিত হয়।

এছাড়া এই দিনে কৃষকরা তাদের ফসল ফলানো ও গরু বাছুর রক্ষায় চৈত্র ক্রান্তি দিনে গরুকে নিমপাতা, বাঁশপাতা, স্বর্ণলতার লতা, কাঁচা ঘাস কেটে একটি মিশ্র খাবার প্রস্তুত করে খাওয়ানো হয়। এ সময় গরু মহিষের রোগ সারাতে এবং রোগ থেকে রক্ষার জন্য ‘ডাক-গোয়াল’ নামের এক প্রকার লোকপশুচিকিৎসকের কাছ থেকে নানা টোটকা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ঐসব ডাক-গোয়াল রা নানান শিকড় বাকড় লতা পাতায় বটিকা ও মন্ত্র পড়ে দিয়ে যায়। তারা নানান ছন্দ দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে।

কৃষকেরা ক্ষেতের রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় রোধে ক্ষেতের নাড়া (আবর্জনা) আগুনে পুড়িয়ে দেয়। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী এই কাজ করলে নাকি সারা বছর তাদের ফসল রক্ষা পাবে। এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তির দিনে কৃষিজীবী মানুষেরা তাদের বাড়িঘর পরিচ্ছন্নতা, কৃষি যন্ত্রপাতি, ধানের গোলা, গরু বাছুর পানিতে গোসল করে পরিষ্কার করার রেওরাজ ছিল।

এছাড়া ফসলের বীজ রাখার মাটির পাত্র এবং সংরক্ষিত বীজ রোদে শুকিয়ে ঝেড়ে ময়লা পরিষ্কার করে নিমপাতা দিয়ে আবার পাত্রে রেখে সে পাত্রের মুখ মাটি দিয়ে লেপ দিয়ে রাখা হতো। এই দিনে কৃষকেরা তাদের বাঁশের ঝাড়ে আগুন দিয়ে পোকামাকড় পুড়িয়ে দিতো। এতে ক্ষতিকারক রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। কারণ খনার বচনে বলেছেন, ‘চৈত্রে আগুন বৈশাখে মাটি বাঁশ হবে পরিপাটি’।

নতুন গাছ লাগানো প্রস্তুতির জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত প্রস্তুত করা হয় এই দিনে। সবজির বীজ লাগানো হয়। চৈত্রের শেষে লাগানো সবজি নাকি বড় হয়। হলুদ আদা লাগানো হয় এই সময়ে।

চৈত্র সংক্রান্তি দিনে বাড়ির বৌ ঝিরা মানত পূরণের জন্য এলাকার প্রাচীন কোন বট, অশ্বথ, তেঁতুল গাছ তলায় ভোগ দিতে দেখা গেছে। এই ভোগে ছিল দুধ, আতপ চাল, সিঁদুর, লাল সুতা। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের ভোগ সন্তুষ্টি পর তাদের মনোবাসনা পূরণ হয়।

জামালপুর জেলার দুরমুটে হযরত শাহ্ কামাল (রহ.) দরগায় এই চৈত্রের শেষ দিনে মনোবাসনা পূরণের জন্য মানত দেওয়ার প্রথা এখনো চালু রয়েছে। এলাকার লোকজন সারা বছরের মানত পুরণের জন্য চৈত্রের শেষ রাতে ভীড় করে দরগায়। এক মাস ব্যাপী ওরসের মেলা শুরুর রাতে এই মানত পূরণের উৎসব চলে। কোন কোন এলাকায় মুরগি, হাঁস, কবুতর ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়।

এমন দৃশ্য দেখেছিলাম, বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায়। সেই মেলায় মনোবাসনা পুরণের লক্ষ্যে প্রাচীন বট তলায় কবুতর ভোগ দেওয়া হয়। মেলাটি ৩০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসছে। ভোগ দেওয়ার রীতিটিও সেই সময় থেকে এখনো চলে আসছে।

বাঙালি সব সময় উৎসবের আনন্দেই মজে থাকে। বারো মাসে তের পার্বণ কথাটির তাৎপর্য এখানেই নিহিত।

তাই বলতে চাই-

‘তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

লেখক: সাংবাদিক ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক

প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতা চর্চায় মির্জা সাহেব ও তার ‘সাপ্তাহিক তওফিক’

চৈত্রসংক্রান্তি : কিছু লোকাচার লোকবিশ্বাস

আপডেট সময় ০৮:২৯:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আজ চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা বছরের শেষ দিন। বছর শেষ ও নতুন বছরের আগমনের এই দিন বাঙালির কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যমুনা অববাহিকা অঞ্চলে এই দিনে কিছু লোকাচার ও লোকবিশ্বাস নিয়ে কথা বলবো আজ।

শত শত বছর ধরে বাঙালি সমাজে চৈত্র সংক্রান্তি দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বী চড়কপূজা করে থাকে। নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তি পালন করা হয়। এই চৈত্রসংক্রান্তির দিনই হিন্দু ধর্মের সব থেকে প্রধান উৎসব পূজা। একটি লম্বা কাঠকে চড়ক গাছ হিসেবে পূজো করা হয়। এই চড়কগাছে একজন ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর পিঠে, হাতে, পায়ে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জ্বলন্ত বাণ শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিও প্রচলিত রয়েছে। তবে এখনকার দিনে এই প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কোন কোন স্থানে এখনো চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এই নিয়ম বন্ধ করে দেয়। জামালপুর অঞ্চলে কোথাও কোথাও এখনও তা প্রচলিত আছে। চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনে কোন তীর্থক্ষেত্রে স্নান করলে অক্ষয় পুণ্য লাভ হয় বলে হিন্দু প্রথায় বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও এই দিন স্নানের পর প্রবীণ মানুষদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে মঙ্গল হয় বলে লোক বিশ্বাস রয়েছে। এ সময় বিভিন্নস্থানে শিব গাজনের মেলা বসতো।

লোকায়িত বাংলার বাঙালি সমাজে বৃষ্টির প্রার্থনায় হুতুম পোতা নামের একটি লোক বিশ্বাস আজও গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। তা হলো, একটি কচি কলা গাছ সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে এবং তার ভিটি তৈরি করে কাদামাটি দিয়ে লেপ দিয়ে কালি, সিঁদুর, চুন দিয়ে নানান আলপনা আঁকতে হয়। পরে তার সামনে তিনটি গর্ত করে তাতে দুধ, আতপ চাল, সিঁদুর দিয়ে ভরে চারিদিকে নানান বুনো ফুল দিয়ে গাছটিকে সাজাতে হয়। পরে পাটের আঁশ কালো রং করে অথবা কচুরিপানা শিকড় লম্বা করে চুল তৈরি করে কলা গাছটিকে সাজিয়ে তুলে, এসময় ছেলে মেয়েরা নানান গীত গায়। এবং তারা গীত শেষে সারা শরীর কালিতে মেখে ওই কালা গাছটিকে তুলে বাঁশের কুলা বা ডালাতে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল ডাল মসল্লা সংগ্রহ করে।

বৃষ্টির প্রার্থনায় নানান লোক ছড়া বা গীত গাইতে থাকে। পরে তাদের সংগ্রহের চাল ডালে খিচুড়ি রান্না করে কলা গাছের হুতুমটিকে নদীর পানিতে বিসর্জন দিয়ে গোসল করে আসে। এবং সবাই মিলে খিচুড়ি খেয়ে উৎসব শেষ করে। তাদের বিশ্বাস এই রীতি পালন করলে নাকি অনাবৃষ্টির এলাকায় বৃষ্টি নামবে। এই লোক বিশ্বাস শত শত বছর ধরে চলে আসছে। যমুনা অববাহিকা অঞ্চলে এখনো এই উৎসব পালিত হয়।

এছাড়া এই দিনে কৃষকরা তাদের ফসল ফলানো ও গরু বাছুর রক্ষায় চৈত্র ক্রান্তি দিনে গরুকে নিমপাতা, বাঁশপাতা, স্বর্ণলতার লতা, কাঁচা ঘাস কেটে একটি মিশ্র খাবার প্রস্তুত করে খাওয়ানো হয়। এ সময় গরু মহিষের রোগ সারাতে এবং রোগ থেকে রক্ষার জন্য ‘ডাক-গোয়াল’ নামের এক প্রকার লোকপশুচিকিৎসকের কাছ থেকে নানা টোটকা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ঐসব ডাক-গোয়াল রা নানান শিকড় বাকড় লতা পাতায় বটিকা ও মন্ত্র পড়ে দিয়ে যায়। তারা নানান ছন্দ দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে।

কৃষকেরা ক্ষেতের রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় রোধে ক্ষেতের নাড়া (আবর্জনা) আগুনে পুড়িয়ে দেয়। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী এই কাজ করলে নাকি সারা বছর তাদের ফসল রক্ষা পাবে। এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তির দিনে কৃষিজীবী মানুষেরা তাদের বাড়িঘর পরিচ্ছন্নতা, কৃষি যন্ত্রপাতি, ধানের গোলা, গরু বাছুর পানিতে গোসল করে পরিষ্কার করার রেওরাজ ছিল।

এছাড়া ফসলের বীজ রাখার মাটির পাত্র এবং সংরক্ষিত বীজ রোদে শুকিয়ে ঝেড়ে ময়লা পরিষ্কার করে নিমপাতা দিয়ে আবার পাত্রে রেখে সে পাত্রের মুখ মাটি দিয়ে লেপ দিয়ে রাখা হতো। এই দিনে কৃষকেরা তাদের বাঁশের ঝাড়ে আগুন দিয়ে পোকামাকড় পুড়িয়ে দিতো। এতে ক্ষতিকারক রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। কারণ খনার বচনে বলেছেন, ‘চৈত্রে আগুন বৈশাখে মাটি বাঁশ হবে পরিপাটি’।

নতুন গাছ লাগানো প্রস্তুতির জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত প্রস্তুত করা হয় এই দিনে। সবজির বীজ লাগানো হয়। চৈত্রের শেষে লাগানো সবজি নাকি বড় হয়। হলুদ আদা লাগানো হয় এই সময়ে।

চৈত্র সংক্রান্তি দিনে বাড়ির বৌ ঝিরা মানত পূরণের জন্য এলাকার প্রাচীন কোন বট, অশ্বথ, তেঁতুল গাছ তলায় ভোগ দিতে দেখা গেছে। এই ভোগে ছিল দুধ, আতপ চাল, সিঁদুর, লাল সুতা। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের ভোগ সন্তুষ্টি পর তাদের মনোবাসনা পূরণ হয়।

জামালপুর জেলার দুরমুটে হযরত শাহ্ কামাল (রহ.) দরগায় এই চৈত্রের শেষ দিনে মনোবাসনা পূরণের জন্য মানত দেওয়ার প্রথা এখনো চালু রয়েছে। এলাকার লোকজন সারা বছরের মানত পুরণের জন্য চৈত্রের শেষ রাতে ভীড় করে দরগায়। এক মাস ব্যাপী ওরসের মেলা শুরুর রাতে এই মানত পূরণের উৎসব চলে। কোন কোন এলাকায় মুরগি, হাঁস, কবুতর ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়।

এমন দৃশ্য দেখেছিলাম, বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায়। সেই মেলায় মনোবাসনা পুরণের লক্ষ্যে প্রাচীন বট তলায় কবুতর ভোগ দেওয়া হয়। মেলাটি ৩০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসছে। ভোগ দেওয়ার রীতিটিও সেই সময় থেকে এখনো চলে আসছে।

বাঙালি সব সময় উৎসবের আনন্দেই মজে থাকে। বারো মাসে তের পার্বণ কথাটির তাৎপর্য এখানেই নিহিত।

তাই বলতে চাই-

‘তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।

লেখক: সাংবাদিক ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক