জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হয়েছেন। ১০ মার্চ সোমবার দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। এক প্রতিবন্ধী কন্যাকে ধর্ষণ মামলার আসামির জন্মনিবন্ধন জ্বালিয়াতি করে বয়স কমানোর ক্ষোভের জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১০ মার্চ সোমবার দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলায় আইনজীবীরা আসামি পক্ষে অংশ নিয়ে শুনানি করেন। মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ধর্ষণের ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। ধর্ষকের পক্ষে আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
শুনানি শেষে ওই মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম তরফদারকে জেরা শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আইনজীবী আব্দুল আওয়াল ছাত্রদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা আইনজীবীদের উপর চড়াও হয়।

এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আইনজীবী মো. খলিলুর রহমান, আইনজীবী আব্দুল আওয়াল, আইনজীবী ওমর ফারুক, আইনজীবী নজরুল ইসলাম তরফদার, আইনজীবী সহকারী রুকনুজ্জামান, শিক্ষার্থী দয়াময়ী এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে ইমন ও ইশান, সদর উপজেলার ইটাইল এলাকার মোজাম্মেলের ছেলে মোয়াজ, হাসিল বটতলা এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে তারেক, জামালপুর পৌরসভার মুসলিমাবাদ এলাকার শাহজাদার ছেলে শিশির, ইসলামপুর উপজেলার হৃদয় আহত হয়।
আহতদের মধ্যে আইনজীবী খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোয়াজ, হৃদয়, তারেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোয়াজ জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল। শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ইমন ও ইশান নামে দুই সহোদর ভাইকে আটক করে তালাবদ্ধ করে রাখেন আইনজীবীরা। পরে পুলিশ তাদের নিরাপদে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান বিবেক এ প্রতিবেদককে বলেন, ইসলামপুরে এক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ধর্ষণের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত করতে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদে আদালতে অবস্থান নেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশে কতিপয় আইনজীবীরা আমাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আমাদের দাবি যেসব আইনজীবী আমাদের উপর হামলা করেছে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হোক।
জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বাবু এ প্রতিবেদককে বলেন, আদালত চলাকালীন সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে আইনজীবীদের হুমকি দেন। তারা এ সময় আইনজীবীদের উপর হামলা চালিয়ে চারজন আইনজীবীকে আহত করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইয়াহিয়া আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের বিচার নিজেই করে ফেলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনজীবীদের সাথে ছাত্রদের ঝামেলা হয়েছে। ঝামেলার বিস্তৃতি কতটুকু তা পর্যালোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।