জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় দৈনিক সংবাদ সারাবেলার প্রতিনিধি ও খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী হৃদয় হাসান ইকবালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা বালিজুড়ী বাজার-মাহমুদপুর সড়কের গোপালপুর এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। দ্রুত হৃদয় হাসানের বিরুদ্ধে মামলাটি প্রত্যাহার ও মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনেরও হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকলীগ নেতা শিমুল মোল্লার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাদাবি করেন হৃদয় হাসান। এ ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার শ্রমিকলীগ নেতা শিমুল মোল্লা বাদী হয়ে হৃদয় হাসান ইকবালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। অথচ হৃদয় হাসান ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রি কলেজের নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় অংশ নেন। ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে অনুষ্ঠিত সকল পরীক্ষায় হৃদয় হাসান অংশ নেন। ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে হৃদয় হাসান পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বালিজুড়ী ইউনিয়ন শ্রমিকদলের আহবায়ক শরীফ উদ্দিন ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ধরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় জেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাংবাদিক, সচেতনমহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরতের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে লিফলেট তৈরি করে বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি করা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দেন হৃদয় হাসান।
অন্যদিকে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মানব সম্পদ বিভাগ মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের ৬৫টি পরিবারের জন্য বিনামূল্যে ল্যাট্রিন বরাদ্দ দেয়। সেই ৬৫টি পরিবারের ল্যাট্রিনের সরঞ্জাম আটকিয়ে বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া গ্রামের মরহুম রহিম উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়নের শ্রমিকদলের আহবায়ক শরিফ উদ্দিন ও একই গ্রামের মরহুম লোকমান বগের ছেলে খাজা বগ কোন পরিবারের কাছে এক হাজার টাকা, আবার কোন পরিবারে কাছ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তারা সাংবাদিক হৃদয় হাসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ সালেহ শাহ শফির প্রত্যয়নপত্র সূত্রে জানা যায়, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কলেজে নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। হৃদয় হাসান প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায়ও হৃদয় হাসান অংশ নেন। তিনি আরও উল্লেখ্য করেন, হৃদয় হাসানের স্বভাব ও নৈতিক চরিত্র প্রশংসনীয়।
হৃদয় হাসানের বাবা আজাদ মিয়া বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। আমার ছেলেকে বানোয়াট অভিযোগে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। মামলায় যে তারিখ ও ঘটনা দেখানো হয়েছে সেদিন আমার ছেলে কলেজেই ছিল। পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছে। কলেজে গিয়ে খোঁজ খবর নিলে আপনারা সত্যতা পাবেন।
এ বিষয়ে সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার জামালপুর প্রতিনিধি মাসুদুর রহমান বলেন, সংবাদ সারাবেলার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বানোয়াট চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে এই মামলাটির রহস্য উদঘাটনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তবে হৃদয় যে নির্দোষ তার অসংখ্য প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। মামলাটি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
এদিকে মামলার বাদী শিমুল মোল্লা মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, এটা বিশাল কাহিনী। বলতে সময় লাগবে। সময় লাগবে কেন, মামলা বানোয়াট নাকি, প্রশ্ন করা হলে তিনি কলটি কেটে দেন।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আল মামুন জানান, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।