আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, জামালপুরের ডিসি এবং এসপিকে বলছি, অনতিবিলম্বে ব্রহ্মপুত্রের জায়গায় দখল করে যারা বিশ্ববিদ্যালয় করেছে ৩২ নম্বরের মত বুলডোজার এনে ওই বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে দিবেন।এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি। নদী দিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি হবে না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হয় জমি কিনে অন্য জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় করেন। নদীকে হত্যা করে বাংলাদেশের প্রাণ প্রাকৃতিক পরিবেশকে হত্যা করে বাংলাদেশের সম্পদকে হত্যা করে বাংলাদেশের মাঠ এবং জেলে সম্প্রদায়ের জীবনকে হত্যা করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা করছে আপনাদের সাবধান করে দিচ্ছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্র নদেই থাকতে পারবে না।
৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকালে জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড়ে জামালপুর জেলা শাখা এবি পার্টি আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এসব কথা বলেন।
নাম না উল্লেখ করে একটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় কোন ফেরাউনের জন্ম হয় নাই, আমরা জন্ম হতে দিব না। আপনারা চাঁদাবাজি করছেন। চাঁদাবাজি বন্ধ করেন। টেম্পুস্ট্যান্ড দখল করেছেন। টেম্পুস্ট্যান্ড দখল বন্ধ করেন। হাট, ঘাট, মাঠ ইজারা বন্ধ করে নতুন রাজনীতিতে ফিরে আসেন। যদি পুরাতন ধারায় রাজনীতি কন্টিনিউ করেন ৩২ নম্বরের মত আপনাদের অবস্থাও আওয়ামী লীগের মতো হবে। চাঁদাবাজদের রাজনীতি বাংলাদেশে থাকবে না। জামালপুরে থাকবে না। চাঁদাবাজির রাজনীতি বন্ধ করে জনগণের রাজনীতি করেন। সেই রাজনীতি হচ্ছে আগামীদিনের রাজনীতি।
তিনি আরও বলেন, যতবারই আওয়ামী দালাল এবং দিল্লির দাসত্ব এইখানে চেপে বসবার চেষ্টা করবে ঠিক ততবারই বাংলার দামাল ছেলেরা আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মত ফিরে আসবে। বুক পেতে দিয়ে আবার লড়াই করে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করবে লাখ লাখ যুবকেরা। নতুন করে রাস্তায় প্রতিবাদের স্লোগান ধরবে। এই বাংলাদেশকে তারা নতুন করে স্বাধীন করে এই বার্তা দিবে যে শেখ পরিবারের ফেরাউনের কাছে বাংলাদেশ বন্ধক দেওয়া হয় নাই। শেখ হাসিনার কাছেও বাংলাদেশ বন্ধক দেওয়া হয় নাই। আওয়ামী লীগের কাছেও বন্ধক দেওয়া হয় নাই।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যারা এই বাংলাদেশে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছে। ভবিষ্যতেও করতে চায়। তাদেরকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফেরাউনের রাজবংশের শাসন বাংলাদেশে আর ফিরে আসবে না। যতদিন এই দেশে মুগ্ধ, ওয়াসিম, নাহিয়ানদের মত যুবকেরা বেঁচে থাকবে ততদিন আমরা লড়াই করব। ততদিন যুদ্ধ হবে। ততদিন লাল সবুজের পতাকা পতপত করে উড়বে। কিন্তু এই লড়াই থেকে কোন আপস হবে না। যেইটা জামালপুরবাসী জুন, জুলাই, আগস্টে প্রমাণ করেছে। যেইটা সারা বাংলাদেশ লড়াই করে ১৬ বছর ধরে বার বার প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতেও প্রমাণ করবে ইনশাআল্লাহ।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, যে বাংলাদেশ লড়াই করতে শিখেছে বছরের পর বছর। যে বাংলাদেশ লড়াই করতে শিখেছে আওয়ামী রাজবংশের বিরুদ্ধে। যে বাংলাদেশ ১৬ বছরে হার মানে নাই। সেই বাংলাদেশে যদি ভবিষ্যতে আবার কেউ ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করতে চায়। সেই বাংলাদেশে যদি আবার কোন রাজবংশ এসে বাংলার হাট, ঘাট, মাঠ দখল করতে চায়। যারা মনে করে রাজনৈতিক ব্যানারে নতুন করে চাঁদাবাজের সাম্রাজ্য কায়েম করবে। তাদেরকে বলছি ৩২ নম্বরে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিন। বাংলাদেশ আগের জায়গায় নাই। রাজনৈতিক ব্যানারে বাসস্ট্যান্ড দখল করবেন। নদী দখল করবেন। অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বানাবেন। ব্রহ্মপুত্রকে হত্যা করবেন। সেই রাজনীতি বাংলাদেশে থাকবে না। ব্রহ্মপুত্রকে জীবিত করতে হবে। ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে যত অবৈধ স্থাপনা আছে সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
ব্যারিস্টার ফুয়ার বিডিআরদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিডিআর জোয়ান যারা পিলখানা গণহত্যায়, মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর জেলে ছিলেন তারা আমার সাথে দেখা করতে আসে। তারা আপনাদের জামালপুরের সন্তান। আপনারা জানেন এখনও ছয়শর উপরে বিডিআর সদস্য বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। তারা বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। তারা জানেন না তাদের কি অপরাধ ছিল। তাদের অনেকের ৩৫ বছর চাকরি করার পরেও বেতন না পেয়ে, পেনশন না পেয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলছি, উপদেষ্টাকে বলছি, বিডিআর রিলেটেড যে পিলখানা কমিশন হয়েছে তাদেরকে বলছি, এসকল নিরপরাধ যারা ফৌজদারি অপরাধ করেন নাই। যারা বিদ্রোহের সাথে জড়িত ছিলেন না। সেই সকল জামালপুরবাসী বিডিআরের জোয়ান এবং সারা বাংলাদশে যে সকল বিডিআর সদস্য আছেন তাদের প্রতি আপনারা ইনসাফ করেন। ন্যায্যতার ভিত্তিতে মিথ্যা মামলা তুলে নেন। তাদের চাকরি ফেরত দেন। পুনর্বহাল করেন। পেনশন ফিরিয়ে দেন। যেই বছরগুলো তিনি জেলে ছিলেন নিরপরাধের সাথে তার চাকরির বেতনগুলো ফিরাইয়া দেন। পরিবারকে পুনর্বাসন করেন। এই অন্যায্য আচরণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করি না। তাই তদন্ত সাপেক্ষে যারা যারা ফৌজদারি অপরাধ করেন নাই, তাদের সকল সুযোগ সুবিধা ফিরিয়ে দিয়ে এই জামালপুরের সন্তানদেরকে এবং সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার বিডিআর জোয়ানকে তার ন্যায্য সন্মান এবং মর্যাদা ফিরিয়ে দিবেন সেটাই আমরা দাবি করছি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণ করে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আপনারা দেখেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জামালপুর জেলার ১৬ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এই লাল সবুজের পতাকাকে সারাদেশের মানুষের মত করেই যেভাবে উচ্চকৃত করে দিলেন আজকে আমরা সেই ১৬ জন শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই সব আহত ও উৎসাহী যোদ্ধাদেরকে যারা প্রতিবন্ধী হয়েছেন, হাত-পা হারিয়েছেন, ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করার মধ্যে দিয়ে যে বার্তা তারা আওয়ামী ও তাদের দোসরদেরকে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপস হবে না।
এবি পার্টি জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আইনজীবী ছানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী লিপসন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুব পার্টির সদস্য সচিব হাদি উজ্জামান খোকন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় এবি পার্টির আহ্বায়ক শাজাহান মল্লিক, এবি পার্টি জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম খালেক, জামালপুর যুব পার্টির আহ্বায়ক মো. শিহাব ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস কুদ্দুস তালুকদার, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) জামালপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি আইনজীবী মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
জনসভার আগে ফৌজদারি মোড়ে এবি পার্টির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা শেষে শহরের বসাক মার্কেট এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।