ঢাকা ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদারগঞ্জে মাটি ধসে দেবে গেছে সেতু, যানবাহন চলাচল বন্ধ

oplus_1024

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি বন্যায় একটি সেতুর দু’পাশ ও নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের বীরপাকেরদহ এলাকায় অবস্থিত। প্রায় সাত মাস ধরে ভেঙে পড়ে থাকা সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানির স্রোতে মাটি সরে গিয়ে সেতুটির একপাশ দেবে গেছে। ভেঙে গেছে দু’পাশের সংযোগ সড়ক। স্থানীয়রা ফসলি জমির ভেতর দিয়ে চলাফেরা করছে। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় কৃষক, রোগী, নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৪ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে যায় এবং পানির স্রোতে ভেঙে যায় সংযোগ সড়ক। এরপর থেকে সেতুটি চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়ে আছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেতুটি দিয়ে মির্জাপুর, চরপাকেরদহ, বাংলা বাজার, বীর পাকেরদহ এলাকাসহ বেশ কয়েকেটি এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সেতুটি নির্মাণের কয়েক মাস পরই বন্যায় পানির স্রোতে সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেতুর দু’পাশে মাটি ভরাট করে চলাচল করলেও সম্প্রতি ২০২৪ সালের বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে যায় এবং পানির স্রোতে ভেঙে যায় সংযোগ সড়ক।

চরপাকেরদহ ফকিরপাড়া এলাকার আজহার আলী আকন্দ বলেন, সেতুর কিছু দূরেই একটা বাজার রয়েছে, বিভিন্ন পণ্য বাজারে নিতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই প্রতিবার বন্যায় দু’পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা প্রতিবারই মেরামত করে কোন রকম চলাচলের উপযোগী করে। গত জুলাই মাসের শুরুতে বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে গেছে এবং সংযোগ সড়কও ভেঙে গেছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই সেতু দিয়ে চলাচলকারী লোকজন। সেতুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

বীরপাকেরদহ গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, দীর্ঘদিনে সেতুটি সংস্কার না করায় দুর্ভোগে রয়েছেন। তাদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ ঘুরে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করতে হয়। সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করা হলে অল্প সময়ে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল উপজেলা সদর এবং আশপাশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যেতে পারবে।

মির্জাপুর এলাকার কৃষক নোয়াব আলী জানান, সেতুটির উত্তর পাশে তাদের বেশির ভাগ ফসলি জমি। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ পাশে বাড়ি হওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন ফসল দু’কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বাড়িতে আনতে হচ্ছে। এতে ফসল পরিবহনে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মেহেরাব হোসেন বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। দ্রুত সেতুতে চলাচলে ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজ উদ্দিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, বন্যার পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। সেখানে নতুন একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেই প্রস্তাব অনুমোদন হলে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারগঞ্জে মাটি ধসে দেবে গেছে সেতু, যানবাহন চলাচল বন্ধ

আপডেট সময় ১০:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি বন্যায় একটি সেতুর দু’পাশ ও নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের বীরপাকেরদহ এলাকায় অবস্থিত। প্রায় সাত মাস ধরে ভেঙে পড়ে থাকা সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানির স্রোতে মাটি সরে গিয়ে সেতুটির একপাশ দেবে গেছে। ভেঙে গেছে দু’পাশের সংযোগ সড়ক। স্থানীয়রা ফসলি জমির ভেতর দিয়ে চলাফেরা করছে। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় কৃষক, রোগী, নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৪ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে যায় এবং পানির স্রোতে ভেঙে যায় সংযোগ সড়ক। এরপর থেকে সেতুটি চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়ে আছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেতুটি দিয়ে মির্জাপুর, চরপাকেরদহ, বাংলা বাজার, বীর পাকেরদহ এলাকাসহ বেশ কয়েকেটি এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সেতুটি নির্মাণের কয়েক মাস পরই বন্যায় পানির স্রোতে সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেতুর দু’পাশে মাটি ভরাট করে চলাচল করলেও সম্প্রতি ২০২৪ সালের বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে যায় এবং পানির স্রোতে ভেঙে যায় সংযোগ সড়ক।

চরপাকেরদহ ফকিরপাড়া এলাকার আজহার আলী আকন্দ বলেন, সেতুর কিছু দূরেই একটা বাজার রয়েছে, বিভিন্ন পণ্য বাজারে নিতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই প্রতিবার বন্যায় দু’পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা প্রতিবারই মেরামত করে কোন রকম চলাচলের উপযোগী করে। গত জুলাই মাসের শুরুতে বন্যায় সেতুটির একাংশ দেবে গেছে এবং সংযোগ সড়কও ভেঙে গেছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই সেতু দিয়ে চলাচলকারী লোকজন। সেতুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

বীরপাকেরদহ গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, দীর্ঘদিনে সেতুটি সংস্কার না করায় দুর্ভোগে রয়েছেন। তাদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ ঘুরে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করতে হয়। সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করা হলে অল্প সময়ে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল উপজেলা সদর এবং আশপাশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যেতে পারবে।

মির্জাপুর এলাকার কৃষক নোয়াব আলী জানান, সেতুটির উত্তর পাশে তাদের বেশির ভাগ ফসলি জমি। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ পাশে বাড়ি হওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন ফসল দু’কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বাড়িতে আনতে হচ্ছে। এতে ফসল পরিবহনে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মেহেরাব হোসেন বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। দ্রুত সেতুতে চলাচলে ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজ উদ্দিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, বন্যার পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। সেখানে নতুন একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেই প্রস্তাব অনুমোদন হলে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।