জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া এলাকায় জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, পেট্রোবাংলার রূপকল্প-৩ প্রকল্পের আওতায় মাদারগঞ্জ উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৭ সালে তারতাপাড়া এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। ১৬৭ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে প্রায় ৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন এবং লিংক রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষে আজারবাইজানের গ্যাস কূপ খনন প্রতিষ্ঠান সকার (স্টেট ওয়েল কোম্পানি অব দ্যা আজারবাইজান রিপাবলিক) খনন কাজ না করে চলে যায়। এ অবস্থায় দীর্ঘ নাত বছর পর জামালপুর-১ নামে প্রকল্পের আওতায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের মাধ্যমে ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে এই প্রকল্পের খনন কাজ উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খননে খরচ হবে ১৬৮ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে এখানে ৪০০ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন এখান থেকে দশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। যা জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। এখানে গ্যাস পাওয়া গেলে আশেপাশে আরো কূপ খনন করলে এখানকার জনসাধারণের জীবনমান উন্নত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাসের সঙ্কট কমাতে আগামী দু’বছরে সারা দেশে ১০০টি নতুন গ্যাস কূপ খনন করা হবে। এ ছাড়াও পুরোনো ৩১টি গ্যাস ক‚প সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রমের উদ্বোধনের আগে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মশিউর রহমান।
এ সময় মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ্, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েদা খানম লিজা, মাদারগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমানসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

বাপেক্সের কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেশন ব্লক-৮ এর জামালপুর-মাদারগঞ্জ এলাকায় ১৯৮৪ সালে সংগৃহীত সাইসমিক উপাত্ত থেকে সর্বপ্রথম লিড/প্রসপেক্ট এর ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ২০১৪-১৫ মাঠ মৌসুমে উক্ত এলাকায় দ্বি-মাত্রিক সাইসমিক জরিপ এবং ২০১৫-১৬ সালে ক্লোজ-গ্রিড সাইসমিক সার্ভে সম্পন্ন করা হয়। জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপটির গভীরতা ২৮০০ মিটার (+২০০মি)। সংগৃহীত ২ডি সাইসমিক উপাত্ত, নিকটবর্তী খনককৃত হাজিপুর-১, বগুড়া-১ ও ২ কূপের খনন ও ভ-ূতাত্বিক উপাত্ত অনুযায়ী জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ থেকে বাণিজ্যিক গ্যাস আবিষ্কৃত হলে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ হবে ২৮০ বিসিএফ। যার মূল্য ভোক্তা পর্যায় বিবেচনায় ১৬ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা (বাপেক্সের মার্জিন বিবেচনায় তিন হাজার ১৭১ কোটি টাকা। কূপটি খনন করতে ১৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের দিকে খনন কার্যক্রম শেষ হবে। এ কূপ থেকে দৈনিক ১০ এমএমএসসিএফ গ্যাস উত্তোলিত হবে বলে আশা করা যায়। গ্যাস পাওয়া গেলে আনুমানিক ২৫-৩০ বছর গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। এ কূপে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে শেরপুর ও ঘাটাইলে আরও তিনটি কূপ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে।