জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শিহাটা গ্রামে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল, জমি দখলের প্রতিবাদ করায় দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ দখলদার মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সকল আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছন ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের স্ত্রী আছমা আক্তার। ২০ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আছমা আক্তার অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, মেলান্দহ উপজেলার শিহাটা মৌজার ৪১৬ নম্বর বিআরএস খতিয়ান ও ৫২২ নম্বর দাগভুক্ত ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিসহ ইসমাইল হোসেন ও রবিউল ইসলামদের স্বত্বদখলীয় তার (আছমা আক্তার) স্বামী মো. রবিউল ইসলাম ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখলে আছেন। ওই জমিতে রবিউল ইসলাম ঘর তুলতে গেলে পাশের আলোদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতার ভাই মো. আসাদুজ্জামান সেখানে নিজেই ঘর উঠান। ওই জমি নিয়ে ইতিপূর্বে নয়ানগর ইউপি ও চরবানীপাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠক করে দিলেও আসাদুজ্জামানেরা তা মানেননি।
একপর্যায়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিচার চাওয়া হলে ১৫ জানুয়ারি দুপুরে শালিস বৈঠক হয়। সেখানেও আসাদুজ্জামান ও তার লোকজন সিদ্ধান্ত মানেন নাই। এ কারণে ইউএনও তাদের বিরুদ্ধে ভূমি অধিকার আইনের উচ্ছেদ মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
এতে ক্ষীপ্ত হয়ে আসাদুজ্জামান ও তার লোকজন ১৬ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নিজেরাই নিজেদের ঘরভাড়ি ভাঙচুর করে। পরদিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তারা আছমা আক্তারের স্বামীর ফুফাতো ভাই নজরুল ইসলমাম ও আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদ্যের ওপর আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫০ জনের সশস্ত্র লোকজন নিয়ে হামলা চালায় এবং সবাইকে গুরুতর জখম হাড়ভাঙ্গা, মাথা ও সারা শরীরে আহত করে এবং ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে।
এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে চাইলে তারা বাধা দেয় এবং দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাদেরকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসাদুজ্জামানেরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নালিশি জমিতে সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার টানিয়ে রাখে এবং বেলা ১১টার দিকে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলে আমরা নাকি তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট করেছি। প্রকৃতপক্ষে তাদের ওই হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাটি ছিল আমাদেরকে ঝামেলায় ফেলার জন্য।
ওই ঘটনার জেরে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক বানোয়াট মামলা দায়ের করে আমাদের সকলকে ভয়ভীতি ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলাটি কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই মামলাটি এফআইআর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আছমা আক্তার। তিনি আরও বলেন, আসাদুজ্জামানের এক ভাই সোহরাব কৃষক লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি এবং ফুফাত ভাই জহুরুল ইসলাম নয়ানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের কারণে রবিউল ইসলাম ও তার স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আছমা আক্তার আরও বলেন, আমার শ্বশুর ইসমাইল হোসেন ও আমার ফুফাত ভাসুর নজরুল ইসলামদের পৈর্তৃক প্রায় ৩ বিঘা জমি দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছে আসাদুজ্জামান ও তার লোকজন। তারা আমার কাছ থেকে দশ লাখ টাকার জমি বন্দক দিয়ে তা বর্তমানে অস্বীকার করছেন। ওই জমিতে আমি দুই বছর ধরে ফসল আবাদ করছি। আসাদুজ্জামানদের ভয়ে সব সময় আতঙ্কে আছি। গত বছরের আগস্ট মাসেও তারা একবার আমার এবং আমার স্বামীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোন প্রকার আইনি সহায়তা এমনকি পুলিশের কাছ থেকেও কোন সহায়তা পাইনাই। আমাদের দায়ের করা মামলার কোনআসামিকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। আমাদের জমি বেদখলকারী ও আমাদেরকে নির্যাতনকারী আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।