জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিনা চাষে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকেরা। বিনা খরচে সরিষা আবাদ করে ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা তাদের। এক সময় লাভ না হওয়া ও অব্যাহত লোকসান গুনতে থাকায় এ উপজেলার চাষীরা সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে এখন কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এখানকার চাষীরা আবারও সরিষা চাষে মনোযোগী হয়েছেন।
এদিকে বিনা চাষে সরিষা আবাদ আরও একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চলতি মৌসুমে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে লাভবান হবেন চাষীরা এবং আগামীতে সরিষা আবাদে কৃষকেরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে চার হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনা চাষে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এবার এ উপজেলায় সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ২৭০ হেক্টর জমি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এখন এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সরিষা ফুলের হলুদ বর্ণে রঙিন হয়ে উঠেছে মাঠ-প্রান্তর। ফুলের ম ম গন্ধ ছড়িয়েছে ফসলি মাঠের চারদিকে। মৃদু বাতাসের দোলায় প্রস্ফুটিত সরিষা ফুলের সঙ্গে মৌমাছির নাচন কৃষককে দেখাচ্ছে ভালো ফলনের স্বপ্ন। খরচ কম হওয়ায় চাষিরা সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশানুরূপ ফলন ঘরে তুলতে শেষ সময়ে সরিষা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার সরিষা চাষীরা।
গুনারিতলা ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর ও সিধুলী ইউনিয়নের বীরভাটিয়ানি এলাকার খোরশেদ আলম, সুলতান আকন্দ, আব্দুল্লাহ, সোলাইমানসহ বেশকয়েকজন সরিষা চাষী জানান, আমন ধান কাটার ১৫ দিন আগে খেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে ওঠে। আমন ধান কাটার পর জমিতে হাল চাষ করে সরিষার আবাদ করতে গেলে বোরো আবাদ পিছিয়ে যায়। যার ফলে অনেক কৃষক সরিষা আবাদ করতে চায় না। আবার জমি হাল চাষের খরচও পড়ে যায় বিঘাপ্রতি হাজার টাকার ওপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, ফলে উৎপাদন খরচও কমে আসছে।
নিশ্চিতপুর এলাকার চাষী মঞ্জু মিয়া জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শসহ প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার পেয়ে এক একর জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করেছেন। এই আবাদে তার কোনও খরচ হয়নি। নিজেই সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা করেন। সরিষার বাম্পার ফলন হবে এবং লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা এই তার।

বীর লোটাবর এলাকার কৃষক সুমর আলী জানান, বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা যায় এটা আগে জানা ছিল না তার। চলতি মৌসুমে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বিনা চাষে ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। এবার বিনা চাষে সরিষার ফলন ভালো পেলে তিনি আগামীতে আরও বেশি জমিতে চাষ করবেন।
সরিষা চাষী মিন্ঠু মিয়া জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে বিনা চাষে ও দুই বিঘা জমিতে জমি হাল চাষ করার পর সরিষা আবাদ করেছেন। হাল চাষে আবাদের চেয়ে বিনা চাষের সরিষার খেত বেশি ভালো হয়েছে। বিনা চাষে সরিষা এতটা ভালো হবে তার আগে জানা ছিল না। তিনি আগামীতে আরও বেশি জমিতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
বীর ভাটিয়ানি এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটার আগেই তার এক একর জমিতে সরিষা বীজ বপন করেন। এর ১৫ দিন পরে আমন ধান কেটে ফেলেন। ওই জমিতে সরিষার চারা গজিয়ে ওঠে। কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া সার জমিতে প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া আর কোনও খরচ করতে হয়নি সরিষা আবাদে। বিনা চাষে সরিষার ফলন ভালো হবে দাবি করে তিনি আরও জানান, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সরিষা কেটে ঘরে তোলা যাবে। এরপর সরিষা বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে জমিতে বোরো ধান আবাদের প্রস্তুতি নেবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুল ইসলাম বলেন, এবারই প্রথম এ উপজেলায় বিনা চাষে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে ৪ হাজার ৪০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে সরিষা বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে উপজেলার সব দুই ও তিন ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।