ঢাকা ১০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নরুন্দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হকের মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত শেখ মুজিবকে দেবতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল : হাবিব উন নবী খান সোহেল বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত আদালত, প্রসিকিউশন, প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে কাজ করলে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে : আইন উপদেষ্টা অপারেশন ডেভিল হান্টে কোন দুষ্কৃতকারী যেন রেহাই না পায় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনা শীর্ষ অটো প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি এআই ডিপসিক প্রযুক্তির গাড়ি আনছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত অঘোষিত সেমিফাইনালে ১২ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা জামালপুরে যুব অনূর্ধ্ব ১৮ কাবাডি প্রতিযোগিতা শুরু

সরিষাবাড়ীতে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে হত্যা, আটক ২

সরিষাবাড়ী : প্রতিপক্ষের হামলায় আতাউর রহমান বিপুলের মৃত্যুতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই তার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আতাউর রহমান বিপুল (৫০) নামে একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার চাচাত ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ১৭ই জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পোগদিঘার ইউনিয়নের তারাকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে।

আতাউর রহমান বিপুল তারাকান্দি গ্রামের আনোয়ার হোসেন ওরফে কালু তালুকদারের ছেলে। ঘটনার সময় দুই নারীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলনে-নিহত আতাউর রহমানের স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫) ও তার মা আছমা বেগম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন কালু মিয়া ও তার চাচাত ভাই তোতা মিয়ার সাথে বসতবাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ১৭ জানুয়ারি দুপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পুনরায় আতাউর রহমান বিপুল ও প্রতিপক্ষ তোতা মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর তোতা মিয়ার ছেলে আপেল মাহমুদ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে আতাউর রহমান বিপুল ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আতাউর রহমান বিপুলের ডান হাত ও ডান পা কুপিয়ে আলাদা করে ফেলে। তার স্ত্রী মুক্তা বেগমের ডান হাতের তিনটি আঙুল ও বাম পায়ের রগ কেটে ফেলে।

সরিষাবাড়ী : প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আতাউর রহমান বিপুলের মরদেহ দেখতে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভিড় করেন এলাকাবাসী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এই অবস্থা দেখে আতাউর রহমান বিপুলের মা আছমা বেগম ফেরাতে গেলে তারও একটি হাত ভেঙে দেয় আপেল মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। তাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে আসতে থাকলে প্রতিপক্ষ আপেল মাহমুদসহ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উচিয়ে হৈ হোল্লর করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে স্থানীয়রা আতাউর রহমান বিপুল, মুক্তা বেগম ও আছমা বেগমকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তবরত চিকিৎসক মো. রবিউল ইসলাম তাৎক্ষণিক আতাউর রহমান বিপুলকে মৃত্ ঘোষণা করেন। আহত ওই দুই নারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে তার স্বজনেরা। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সৌরভ বাবু জানান, মারামারি চলাকালে আহতদের ডাক চিৎকারে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আতাউর রহমান বিপুলের হাত ও পা দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে আছে। আতাউর রহমান বিপুলের স্ত্রী মুক্তা বেগমের হাতের আঙুল ও পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এ সময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় কেউ তাদের কাছে যেতে সাহস পানিনি। পরে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে মাইকিং করে লোকজনকে ডেকে আনি। লোকজনের আসা দেখে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন কালু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের জমিতে লাগানো গাছ জোর করে তোতা মিয়া ও তার ছেলে আপেল মাহমুদ কেটে ফেলে। বিষয়টি আমার ছেলে আতাউর রহমান বিপুল ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম জানার জন্য গেলে তাদের ওপর হামলা করে। তারা রামদা দিয়ে কুপিয়ে ছেলেকে হত্যা করে এবং ছেলের মা ও ছেলের বউকেও কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবি জানাচ্ছি।

সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হাত-পা বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় গুরুতর আহত আতাউর রহমান বিপুলসহ দুই নারীকে হাসাপাতালে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। হাসপাতালে আনার সময়ই আতাউর রহমান বিপুলকে মৃত অবস্থায় পাই। গুরুতর আহত দুই নারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  রেফার্ড করা হয়েছে।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চাঁদ মিয়া বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, জমির বিরোধ নিয়ে আতাউর রহমান বিপুল ও আপেল মাহমুদদের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরে ১৭ জানুয়ারি সকালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আতাউর রহমান বিপুল নিহতসহ আরও দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ডান হাত ও ডান পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আতাউর রহমান বিপুলের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এ হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আনোয়ারা বেগম ও সাজিদ মিয়া নামের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নরুন্দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হকের মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত

সরিষাবাড়ীতে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে হত্যা, আটক ২

আপডেট সময় ০৭:৩৯:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আতাউর রহমান বিপুল (৫০) নামে একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার চাচাত ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ১৭ই জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পোগদিঘার ইউনিয়নের তারাকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে।

আতাউর রহমান বিপুল তারাকান্দি গ্রামের আনোয়ার হোসেন ওরফে কালু তালুকদারের ছেলে। ঘটনার সময় দুই নারীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলনে-নিহত আতাউর রহমানের স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫) ও তার মা আছমা বেগম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন কালু মিয়া ও তার চাচাত ভাই তোতা মিয়ার সাথে বসতবাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ১৭ জানুয়ারি দুপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পুনরায় আতাউর রহমান বিপুল ও প্রতিপক্ষ তোতা মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর তোতা মিয়ার ছেলে আপেল মাহমুদ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে আতাউর রহমান বিপুল ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আতাউর রহমান বিপুলের ডান হাত ও ডান পা কুপিয়ে আলাদা করে ফেলে। তার স্ত্রী মুক্তা বেগমের ডান হাতের তিনটি আঙুল ও বাম পায়ের রগ কেটে ফেলে।

সরিষাবাড়ী : প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আতাউর রহমান বিপুলের মরদেহ দেখতে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভিড় করেন এলাকাবাসী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এই অবস্থা দেখে আতাউর রহমান বিপুলের মা আছমা বেগম ফেরাতে গেলে তারও একটি হাত ভেঙে দেয় আপেল মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। তাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে আসতে থাকলে প্রতিপক্ষ আপেল মাহমুদসহ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উচিয়ে হৈ হোল্লর করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে স্থানীয়রা আতাউর রহমান বিপুল, মুক্তা বেগম ও আছমা বেগমকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তবরত চিকিৎসক মো. রবিউল ইসলাম তাৎক্ষণিক আতাউর রহমান বিপুলকে মৃত্ ঘোষণা করেন। আহত ওই দুই নারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে তার স্বজনেরা। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সৌরভ বাবু জানান, মারামারি চলাকালে আহতদের ডাক চিৎকারে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আতাউর রহমান বিপুলের হাত ও পা দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে আছে। আতাউর রহমান বিপুলের স্ত্রী মুক্তা বেগমের হাতের আঙুল ও পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এ সময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় কেউ তাদের কাছে যেতে সাহস পানিনি। পরে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে মাইকিং করে লোকজনকে ডেকে আনি। লোকজনের আসা দেখে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন কালু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের জমিতে লাগানো গাছ জোর করে তোতা মিয়া ও তার ছেলে আপেল মাহমুদ কেটে ফেলে। বিষয়টি আমার ছেলে আতাউর রহমান বিপুল ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম জানার জন্য গেলে তাদের ওপর হামলা করে। তারা রামদা দিয়ে কুপিয়ে ছেলেকে হত্যা করে এবং ছেলের মা ও ছেলের বউকেও কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবি জানাচ্ছি।

সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হাত-পা বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় গুরুতর আহত আতাউর রহমান বিপুলসহ দুই নারীকে হাসাপাতালে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। হাসপাতালে আনার সময়ই আতাউর রহমান বিপুলকে মৃত অবস্থায় পাই। গুরুতর আহত দুই নারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  রেফার্ড করা হয়েছে।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চাঁদ মিয়া বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, জমির বিরোধ নিয়ে আতাউর রহমান বিপুল ও আপেল মাহমুদদের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরে ১৭ জানুয়ারি সকালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আতাউর রহমান বিপুল নিহতসহ আরও দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ডান হাত ও ডান পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আতাউর রহমান বিপুলের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এ হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আনোয়ারা বেগম ও সাজিদ মিয়া নামের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।