জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ফসলের মাঠ যেন হলদে বরণে সেজেছে। প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে। দিগন্তজুড়ে ফসলের মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদের আভা। মাঠে মাঠে প্রকৃতিপ্রেমীরা মাতোয়ারা হচ্ছেন সেলফি বা ছবি তুলতে। সব ছাপিয়ে এবার ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় সরিষা চাষীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর রোপা আমনের ভাল ফলনের পর চাষ করা হয় সরিষা। রোপা আমন চাষ শেষে স্থানীয় কৃষকেরা সেই জমিতেই সরিষা চাষ শুরু করেন। চলতি রবি মওসুমে সরিষা চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে পাঁচ হাজার ৫০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। এ বছর সাত হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সেই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি মওসুমে ছয় হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন সরিষা চাষীরা। প্রণোদনা কমে যাওয়ায় এবং অর্থকরী ভুট্টা চাষ ও আলু চাষে আগ্রহ বাড়ায় এবার সরিষার চাষ কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তারা। তবে আগামীতে সরিষার আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে বলে আভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কম খরচে, স্বল্প খরচে ও কম পরিশ্রমে অর্থকরী ফসল পাওয়া যায় সরিষা চাষে। বিশেষ করে ভোজ্য তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। যাতে করে কৃষক নিজের উৎপাদিত সরিষা দিয়েই ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে পারেন সেলক্ষ্য নিয়েই এবার সরিষা আবাদে নেমেছেন স্থানীয় চাষীরা। সরিষা চাষ শেষে আবার ওই জমিতে বোরো চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এবার দেশী সরিষার চেয়ে উন্নতজাতের বারি-১৪, বারি-১৭, টরি-৭ ও বিনা-১১ জাতের বেশি চাষ করা হয়েছে।
তবে সরিষার ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও সরিষার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে কৃষকদের মধ্যে। সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিলেরপাড় গ্রামের সরিষা চাষী মোবারক হোসেন, আ: ছাত্তার ও আক্কাছ আলী জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ভালো ফলনের আশা করছি। এই ফসল উৎপাদনে খরচ কম হওয়ার কারণে আমরা আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তদারকিও করা হচ্ছে। তবে ভাল দাম না পেলে আর সরিষার আবাদ করবেন না বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি চাষে ব্যাপক সরিষা চাষ উপযোগী এলাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ এলাকায় ব্যাপক ফলন হয় সরিষা আবাদে। আবহাওয়া এ বছর কৃষকের অনুকূলে রয়েছে। আশা করছি ব্যাপক ফলন হবে সরিষায়।
তিনি আরও বলেন, চলতি মওসুমে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাঁচ হাজার ৫০০ জন কৃষককে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে বিনামূল্যে ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার ও এক কেজি করে সরিষার বীজ বিতরণ করা হয়।