প্রথিতযশা সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়াবেটিক ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর। এরপর তার নিজ গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহের রেখিরপাড়ায় সমাহিত করা হয় এই গুণীজনকে।
আমানুল্লাহ কবীর ১৯৬৯ সালে দৈনিক পয়গাম পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে ইংরেজি মাধ্যমে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন তিনি। দ্য পিপল-এ কাজ করার সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে পত্রিকার অফিসটি গুঁড়িয়ে দেয়। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান আমানুল্লাহ কবীর। পরে তিনি ঢাকা নগরী ছেড়ে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রেখিরপাড়া গ্রামে তার জন্মস্থানে ফিরে যান। সেখান থেকে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতার পর দ্য পিপল পুনরায় আত্মপ্রকাশ করলে তিনি আবার ওই পত্রিকায় যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগের পাঁচ বছর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের এক সময়কার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর। কাজ করেছেন টেলিগ্রাফ পত্রিকাতেও।
আমানুল্লাহ কবীর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুইবারের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ঢাকাস্থ জামালপুর সমিতি এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সক্রিয় ও একনিষ্ঠ কর্মী। সেই থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তার গভীর অনুরাগ তৈরি হয়। সাংবাদিকতা পেশার শত ব্যস্ততার মাঝেও কবিতা, গল্প ও বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। পরবর্তী সময়ে সমসাময়িক ঘটনার ওপর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখার ওপরই বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। তার লেখা দশটি বই দেশে বিদেশে বেশ সমাদৃত। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার তার নিজ বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহের রেখিরপাড়াতে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তার পরিবার।