সাইবার অপরাধ থেকে প্রজন্মকে রক্ষা, রাষ্ট্রের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারুণ্য উৎসব সামনে রেখে জামালপুরে সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান এনডিসি। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, সাইবার নিরাপত্তার জন্য আমাদের উত্তম চর্চা করতে হবে। তিনি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় বলেন, প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা করা জন্য ইউজার একাউন্টের মাধ্যমে সিস্টেম লগইন করা, আসল সফ্টওয়্যার সিস্টেম ব্যবহার করা, অপরিচিত ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম ব্যবহার থেকে বিরত রাখা, দাপ্তরিক কাজে প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল আইডি ব্যবহার করা এবং কাজ শেষে সিস্টেম লগআউট করা।
ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সম্পর্কে উপস্থাপনা থেকে জানা যায়: ডিজিটাল ডিভাইসসমূহ পাসওয়ার্ড বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সুরক্ষিত রাখা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, প্রতিটি একাউন্ট বা এ্যাপসের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনে ক্যামেরা অপশন চালু রাখা থেকে বিরত থাকা, স্বীকৃত ওয়েবসাইট থেকে এ্যাপস বা সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করা।
অনলাইন বা ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, ওয়েবসাইটে এসএসএল সার্টিফিকেট দেখে ব্যবহার করা, লগ-ইন অপশনসমূহে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা, ইন্টারনেট ব্রাউজার এবং প্রয়োজনীয় প্লাগ-ইনসমূহ নিয়মিত আপডেট রাখা, অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে লক বা তালা চিহ্নযুক্ত সাইট দেখে লেনদেন করা, অপরিচিত ও সন্দেহজনক ই-মেইল বা লিংকে ক্লিক করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে একাউন্টের প্রাইভেসি সেটিং নির্ধারণ করা, একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যাবলী অপরিচিতদের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা, কোন পোস্ট শেয়ার করার আগে এর সঠিকতা যাছাই করা, মিথ্যা সংবাদ, গুজব, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার-প্রচারণা সংক্রান্ত পোস্ট লাইক করা বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা, অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট ব্লক বা রিপোর্ট করা।
সাইবার বুলিং হতে সুরক্ষার ক্ষেত্রে একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যাবলী অপরিচিতদের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা, কারও উদ্দেশে অপমানজনক বা ক্ষতিকর কোন মন্তব্য, লাইক, শেয়ার না করা, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে তা গোপন না রেখে বিশ্বস্ত কাউকে অবহিত করা, অনলাইনে কেউ উদ্ভট বা অনাকাঙ্খিত ছবি বা তথ্য চাইলে তা পরিহার করা, যে ব্যক্তি বুলিং করে তাকে ব্লক করা, বুলিং সংক্রান্ত তথ্যাবলী ভবিষ্যত প্রয়োজনে আইনানুগ পদক্ষেপের জন্য সংরক্ষণ করা।
পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হয়, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, বর্ণ, সংখ্যা, চিহ্ন কমপক্ষে ৮ সংখ্যার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, পাসওয়ার্ড গোপন রাখা এবং অন্যের সাথে শেয়ার না করা, নির্দিষ্ট সময় পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা, সহজে অনুমেয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা, ওয়েব ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা থেকে বিরত থাকা।
জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম তার বক্তব্য বলেন, সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেকে বা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হলে সাইবার আইন সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা জরুরি। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য জনবল, কৌশল দক্ষতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ছাত্র-ছাত্রীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, যত্রতত্র মোবাইল বা ইন্টানেট ব্যবহার না করে পড়ার টেবিলে মনোযোগ দিতে হবে। সুস্থ ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইফতেখার ইউনুছ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আফসানা তাসনিম, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফজলে এলাহী মাকামসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার শতাধিক মানুষ অংশ নেন। সেমিনারে অংশ নিয়ে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ধরনের সেমিনার তৃণমূল পর্যায়ে আয়োজন করারও আহ্বান জানানো হয়।