ঢাকা ১২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের গরু চুরি করে বিএনপিনেতার ভূরিভোজ, গ্রেপ্তার ২

মাদারগঞ্জ : গরু চুরি করে ভূরিভোজের আয়োজনে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকদের ভিড়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় এক কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় সমাবেশের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভূরিভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপিনেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ১১ জানুয়ারি শনিবার উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মাদারগঞ্জ : কৃষকের গরু চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই আসামি। ছবি : খাদেমুল ইসলাম

এ ঘটনায় গরুর চামড়া ও মাংসসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদিকে, ১১ জানুয়ারি বিকালে দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে উপজেলা বিএনপি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ জানুয়ারি সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভূরিভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য ১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠে।

মাদারগঞ্জ : গরু চুরি করে ভূরিভোজ ফাঁস। আয়োজকেরা পালিয়ে গেলে স্থানীয়দের মধ্যে বিরিয়ানী নিয়ে কাড়াকাড়ি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে জানান, ১০ জানুয়ারি রাতে গোয়ালঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখেন গোয়ালঘরের দরজা খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ১১ জানুয়ারি ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপিনেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানী রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়।

স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, ১১ জানুয়ারি শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনার পর কর্মী-সমর্থকেরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভূরিভোজের বিরিয়ানী স্থানীয়রা যে যার মতো করে বাড়িতে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপিনেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর ফোনে অনেকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াজিউর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, ১১ জানুয়ারি সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্যে থেকে সুমন ও বজলু কসাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করে মাদারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী, মিঠু, জামিউল, আব্দুল হাকিম, রতন সরদার, সুজন, বিজ্ঞ চৌধুরী, সাজা, বাদল ও ফতু মিয়া।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আইনজীবী মনজুর কাদের বাবুল খান এ প্রতিবেদককে বলেন, মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, গরু চুরির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষকের গরু চুরি করে বিএনপিনেতার ভূরিভোজ, গ্রেপ্তার ২

আপডেট সময় ১০:৩০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় এক কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় সমাবেশের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভূরিভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপিনেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ১১ জানুয়ারি শনিবার উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মাদারগঞ্জ : কৃষকের গরু চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই আসামি। ছবি : খাদেমুল ইসলাম

এ ঘটনায় গরুর চামড়া ও মাংসসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদিকে, ১১ জানুয়ারি বিকালে দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে উপজেলা বিএনপি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ জানুয়ারি সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভূরিভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য ১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠে।

মাদারগঞ্জ : গরু চুরি করে ভূরিভোজ ফাঁস। আয়োজকেরা পালিয়ে গেলে স্থানীয়দের মধ্যে বিরিয়ানী নিয়ে কাড়াকাড়ি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে জানান, ১০ জানুয়ারি রাতে গোয়ালঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখেন গোয়ালঘরের দরজা খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ১১ জানুয়ারি ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপিনেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানী রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়।

স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, ১১ জানুয়ারি শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনার পর কর্মী-সমর্থকেরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভূরিভোজের বিরিয়ানী স্থানীয়রা যে যার মতো করে বাড়িতে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপিনেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর ফোনে অনেকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াজিউর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, ১১ জানুয়ারি সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্যে থেকে সুমন ও বজলু কসাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করে মাদারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী, মিঠু, জামিউল, আব্দুল হাকিম, রতন সরদার, সুজন, বিজ্ঞ চৌধুরী, সাজা, বাদল ও ফতু মিয়া।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আইনজীবী মনজুর কাদের বাবুল খান এ প্রতিবেদককে বলেন, মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, গরু চুরির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।