স্বপ্ন ছিলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় কিছু হবার। কিন্তু মাধ্যমিকের গন্ডি পার হতে না হতেই বিয়ে হয়ে যায় সাগরিকার। অভাবের সংসারে একটু সুখের প্রত্যাশায়
স্বামীর সাথে চলে যান রাজধানীতে। সংসার দেখার পাশাপাশি ঘরে বসেই শুরু করেন পোশাক তৈরির কাজ। চলতে ছিলো ভালোই। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী শুরু হয় করোনা। থমকে যায় পুরো পৃথিবী। স্বামীসহ ফিরে আসেন বাড়িতে। স্থানীয় যুব উন্নয়ন থেকে পশুপালন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে গবাদিপশু পালন ও ট্রেইলারিং কাজ শুরু করেছিলেন। সেই ব্যবসার পুঁজি এখন প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা। হয়ে উঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
![](http://banglarchithi.com/wp-content/uploads/2025/01/sagorika_pic1-3.jpeg)
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী সাগরিকা আক্তার। সমাজের আর দশটা গৃহবধূর মতো চার দেয়ালের মধ্যে নিরিবিলি জীবনযাপন করার কথা ছিল তারও। স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন কথা ভেবে নিজে কিছু করার ইচ্ছে তার। নিজের ট্রেইলারিং অভিজ্ঞতা আর ২০২০ সালে গরু মোটাতাজা করণ প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেন ব্যবসা। ব্যবসার সফলতা দেখে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উদ্যোক্তা হিসাবে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়।এরপর মেধা, সাহস আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে হয়ে উঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা সাগরীকা বলেন, তার প্রকল্পে রয়েছে, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল, হাঁস-মুরগি কবুতর পালন, পোশাক তৈরি ও বস্ত্রালয়, মনোহারি দোকান, সু-হাউজ, মোবাইল ব্যাংকিং, কসমেটিকস, লিচু বাগান, ও শাক-সবজির বাগান তৈরি করেছেন। তার এই সাফল্য দেখে স্থানীয় নারীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এ কাজে। সাগরিকার এ সফলতার কাজে সর্বদাই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই সহযোগিতা করেন বলে জানান তিনি। সরকারিভাবে আরও সহায়তা পেলে পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চায় সাগরিকা।
তার স্বামী ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনার সময় বেকারত্বের হতাশায় পড়েন স্বামী। সংসারের অভাব অনটনে মধ্যেই কাপড় বানিয়ে সাড়া ফেলে সাগরিকা। সংসারের সব কাজ সামলিয়ে এসব কাজ করতে কিছুটা হিমসিমে পড়লেও তার মধ্যে কোনো ক্লান্ত ভাব দেখিনি।
![](http://banglarchithi.com/wp-content/uploads/2025/01/sagorika_pic1-1.jpeg)
স্থানীয়রা বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে থাকি আমরা। সাগরিকার এসব কার্যক্রমে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। সহজেই তার দোকান থেকে আমরা কেনাকাটা করতে পারি। তার দোকান ও দর্জির কাজের জন্য উপকৃত হয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় একজন নারী বলেন, সাগরিকার দেখাদেখি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করি। ভবিষ্যতে তার মতো একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে চাই।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সাগরিকার কার্যক্রম দেখে প্রথমে তাকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সেই থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের খামার আছে। বর্তমানে তিনি দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন। সাগরিকার মতো হাজারো নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।