জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুতে উঠতে হয় কাঠের মই দিয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের মই বেয়ে সেতুতে উঠে পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাঠের মই দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষদের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সেতুর নকশায় ভুল থাকার কথা জানিয়েছেন এলজিইডি।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার পলিশা গ্রামের খালের উপর দুই বছর আগে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫.৫ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। সেতুটির নির্মাণের কাজ করে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক থেকে সেতুটির উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেতুটির মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়। কিন্তু নকশায় ভুল থাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি এখনও।

স্থানীয়রা জানান, পলিশা গ্রামের ওই খালটি দিয়ে এক সময় নৌকা চলাচল করলেও পশ্চিমাংশ ভরাট করে রাস্তা তৈরি করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা থেকে খালের বিপরীত পাশে ফসলের মাঠ, পলিশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কয়েকটি বসতবাড়ি। ফসল ঘরে নেয়া আর মাঠে কাজ করার জন্য মানুষের খাল পারাপারের জন্য আধা কিলোমিটারের মধ্যে আরও ছোট দুটি সেতু রয়েছে। সেতু দিয়ে চরের ফসল আনা-নেয়ার জন্য গরুগাড়ি, অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করে। উচু ও বড় সেতু হওয়ার কারণে একদিকে যেমন সেতুর সুফল ভোগ করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে কাঠের মই দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে তাদের।

কলেজছাত্র আকরাম হোসেন বলেন, অহেতুক এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তার থেকে রাস্তার সাথে মানানসই একটি ছোট সেতু নির্মাণ করা হলে অনেক ভালো হতো। এখন এই সেতুর কারণে সুবিধার চাইতে ভোগান্তিই বেশি হচ্ছে।

পলিশা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান বর্ষা বলেন, সেতুটি আমাদের সুবিধার জন্য করা হয়েছে কিন্তু রাস্তা থেকে উচু হওয়ার কারণে সেতুতে উঠতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমরা কাঠের মই থেকে পড়ে যাব। আমরা চাই খুব দ্রুত এই সেতুটির কাজ সম্পন্ন করা হোক।

নূর মোহাম্মদ কাফী নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এই সেতুটির কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। সেতুটির দুই পাশে চঙ্গ থাকায় সহজে সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে আমাদের অনেক ছাত্র-ছাত্রী পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

তবে সেতুটির দুই পাশে নেই সংযোগ রাস্তা। খালের এক পাশে ৫ থেকে ৬ ফুটের বাঁশের মই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। চঙ্গ দিয়ে সেতুতে উঠতে হয় তাই স্থানীয়রা ওই সেতুটির নাম দিয়েছেন ‘চঙ্গ ব্রিজ’।

স্থানীয় কৃষক ছন্দ মিয়া বলেন, সেতুটি আমাদের প্রয়োজন ছিল কিন্তু এত উচ্চতা আমরা আশা করিনি। তারা কিভাবে পাশ করছে জানি না। উচ্চতার কারণে দুই দিকে ঢালু দিতে হবে, বাড়ি ঘরে সমস্যা দেখা দিছে। এরপরেও যদি কাজটা সম্পন্ন হয় তাহলে আমাদের সুবিধা হবে।

পলিশা গ্রামের আরিফুজ্জামান বলেন, সেতুটি উচু হওয়ার কারণে রাস্তার দুই দিক থেকে গাড়ি আসবে, এটি তিন রাস্তার একটি মোড় হবে, ফলে এখানে দুর্ঘটনার একটা ঝুঁকি আছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়বে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিৎ।

নির্মাণাধীন সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার কামাল হোসেন জানান, সংযোগ সড়কের বরাদ্দ ছিল না। নতুন করে ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে। সেতুর উচ্চতা বেশি হওয়ায় মূল সড়ককে আরও এক মিটার উঁচু করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।

নকশায় ভুল আছে স্বীকার করে জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল ত্রিপুরা জানান, নতুনভাবে নকশা তৈরি করে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ হলে সেতুটি সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে।