জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষীরা। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরিষা ফুল থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে রয়েছেন ব্যস্ত। লাভের আশায় কৃষকদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, তেল জাতীয় ফসল সরিষার চাষ পদ্ধতি খুব সহজ ও কম খরচে অল্প সময়ে খুবই লাভজনক ফসল। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ রোপণ করা হয়। রোপণের মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় নদ-নদী বিধৌত এলাকা হিসাবে উপজেলায় দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। গ্রামের বাড়িগুলো সরিষার স্বর্গবাড়িতে পরিণত হয়েছে। হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। প্রকৃতি হলুদ চাদর বিছানো মাঠে কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণে। শীতের শিশির সিক্ত সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। হলুদ মাঠের নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ এলাকাবাসী।
ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় তেল উৎপাদনকারী এই ফসল বর্তমানে চাহিদা ও লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে সরিষা চাষে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলন হবে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলে মধু আহরণে ভিড় করছে মৌমাছি। তবে অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে বীজ দেখা দিয়েছে। বীজগুলো বেশ তরতাজা, যা ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুর রহমান জানান, আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, টরি ৭, বিনা-৯, বিনা-১১ টরি সাধ জাত সরিষার চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার জন কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সরিষাচাষীরা জানান, গত বছর এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করে লাভবান হওয়ায় বেশি জমিতে চাষ করেছেন। সরিষার ফুল শেষে ভালো আর বড় বড় বীজ দেখা যাচ্ছে।
ভাতখাওয়া গ্রামের কৃষক আবুবক্কর বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত জমিতে কোনও সমস্যা দেখা যায়নি। বরং সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান বীজের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এতে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হতে পারবো।
কৃষক মজিবর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার ভালো ফুল ও কলি আসছে। আশা করি ভালো ফলন হবে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপজেলা জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর আজাদ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।