ঢাকা ১১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নকলায় আগাম ও বিএডিসি’র বীজআলু চাষে ব্যস্ত চাষীরা

নকলায় পাঠাকাটা বিএডিসি হিমাগার থেকে বীজআলু বের করে মাঠে রোপণের জন্য গ্রেডিং বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

আগাম জাতের ধান ঘরে তুলে এখন আগাম ও বীজআলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চাষীরা। আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় বরাবরের মতো এবারও আলু চাষ করছেন কৃষক। কিছুদিন আগে আগাম জাতের ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ বুনছে। নকলা উপজেলার চরমধূয়া, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, নারায়ণখোলা, চরবশন্তি, বানেশ্বর্দী এলাকায় দেখা যায় কৃষকেরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিএডিসি বীজআলু হিমাগার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বীজআলু রোপণের উত্তম সময়। গত বছর উপজেলায় ২৪৫ একর জমিতে বীজআলু রোপণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন ও অর্জিত হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন। এ বছর ২৬০ একর জমিতে বীজআলু রোপণ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ মেট্রিকটন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আলু চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমাগার থেকে বীজআলু বের করার পর প্রয়োজনীয় প্রিকুলিং, ফ্যানিং ও গ্রেডিং বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষী পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় এই বীজআলু।

বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছেন। এবার আবহাওয়া আলু চাষের অনুক‚ল থাকবে বলে চাষির প্রত্যাশা। বীজের দাম সহনীয়। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তাই কৃষকগণ জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করছেন। শ্রমিকেরাও বসে না থেকে আলুক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। মহিলারাও বিএডিসি আলু বীজ হিমাগারে ও ক্ষেতে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন বলে জানা যায়।

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বীজ আলুচাষী কামরুজ্জামান গেন্দু ও গোলাম মোস্তফা বলেন, গেল বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে ভালো দাম পাব।

নকলায় প্রস্তুতকৃত মাঠে বীজ আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বীজআলু চাষী হাকলিজুর রহমান ও ছাইদুল হক বলেন, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু মাঠ থেকে তোলা যায় বলে আমরা আলু চাষের আগ্রহী হয়েছি।

স্থানীয় কৃষি শ্রমিক জানান, আগে এ সময়টা কোন কাজ থাকতো না। এখন আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক (টিসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শনে গিয়ে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইসহ উৎপাদিত এই আলু বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব। বীজ আলু হিসেবে ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, সানসাইন,সান্তানা ও লেডিরোসেটা বেশি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সানসাইন ও সান্তানা আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নকলা উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। এবছর আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত বীজ আলু সরকার মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে হিমাগারে রাখে এবং খাবারের জন্যও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে রাখে। এতে করে কৃষক বাজারে নিয়ে বিক্রির ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে অধিক লাভবান হয়। প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিএডিসি আলু হিমাগারের কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, কৃষি প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিএডিসির উপপরিচালক (টিসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রবি শস্য হিসেবে আলু আবাদ করে কৃষকেরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে তার জন্য সরকার ২২ কোটি ব্যয়ে নকলা পাঠাকাটা গ্রামে বিএডিসির ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার বীজ আলু হিমাগার তৈরি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নকলায় বিভিন্ন ব্লকে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ হিমাগারটি নির্মাণ হওয়ার ফলে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা বীজআলুর মাঠ নিয়মিত পরিদর্শন করছি এবং চাষীদেরও পরামর্শ দিচ্ছি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নকলায় আগাম ও বিএডিসি’র বীজআলু চাষে ব্যস্ত চাষীরা

আপডেট সময় ০৭:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আগাম জাতের ধান ঘরে তুলে এখন আগাম ও বীজআলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চাষীরা। আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় বরাবরের মতো এবারও আলু চাষ করছেন কৃষক। কিছুদিন আগে আগাম জাতের ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ বুনছে। নকলা উপজেলার চরমধূয়া, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, নারায়ণখোলা, চরবশন্তি, বানেশ্বর্দী এলাকায় দেখা যায় কৃষকেরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিএডিসি বীজআলু হিমাগার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বীজআলু রোপণের উত্তম সময়। গত বছর উপজেলায় ২৪৫ একর জমিতে বীজআলু রোপণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন ও অর্জিত হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন। এ বছর ২৬০ একর জমিতে বীজআলু রোপণ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ মেট্রিকটন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আলু চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমাগার থেকে বীজআলু বের করার পর প্রয়োজনীয় প্রিকুলিং, ফ্যানিং ও গ্রেডিং বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষী পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় এই বীজআলু।

বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছেন। এবার আবহাওয়া আলু চাষের অনুক‚ল থাকবে বলে চাষির প্রত্যাশা। বীজের দাম সহনীয়। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তাই কৃষকগণ জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করছেন। শ্রমিকেরাও বসে না থেকে আলুক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। মহিলারাও বিএডিসি আলু বীজ হিমাগারে ও ক্ষেতে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন বলে জানা যায়।

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বীজ আলুচাষী কামরুজ্জামান গেন্দু ও গোলাম মোস্তফা বলেন, গেল বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে ভালো দাম পাব।

নকলায় প্রস্তুতকৃত মাঠে বীজ আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বীজআলু চাষী হাকলিজুর রহমান ও ছাইদুল হক বলেন, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু মাঠ থেকে তোলা যায় বলে আমরা আলু চাষের আগ্রহী হয়েছি।

স্থানীয় কৃষি শ্রমিক জানান, আগে এ সময়টা কোন কাজ থাকতো না। এখন আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক (টিসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শনে গিয়ে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইসহ উৎপাদিত এই আলু বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব। বীজ আলু হিসেবে ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, সানসাইন,সান্তানা ও লেডিরোসেটা বেশি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সানসাইন ও সান্তানা আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নকলা উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। এবছর আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত বীজ আলু সরকার মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে হিমাগারে রাখে এবং খাবারের জন্যও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে রাখে। এতে করে কৃষক বাজারে নিয়ে বিক্রির ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে অধিক লাভবান হয়। প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিএডিসি আলু হিমাগারের কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, কৃষি প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিএডিসির উপপরিচালক (টিসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রবি শস্য হিসেবে আলু আবাদ করে কৃষকেরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে তার জন্য সরকার ২২ কোটি ব্যয়ে নকলা পাঠাকাটা গ্রামে বিএডিসির ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার বীজ আলু হিমাগার তৈরি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নকলায় বিভিন্ন ব্লকে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ হিমাগারটি নির্মাণ হওয়ার ফলে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা বীজআলুর মাঠ নিয়মিত পরিদর্শন করছি এবং চাষীদেরও পরামর্শ দিচ্ছি।