পানির উপর চাষ হয় বলে এই ফলের নাম ‘পানিফল’। যাকে স্থানীয় ভাষায় সিংড়া বলেও অবিহিত করা হয়। নানা পুষ্টি গুণে ভরপুর এই ফলটি খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। কাঁচা এবং সিদ্ধ করে দুই ভাবেই খাওয়া যায়। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বিলের পতিত জমিতে এই ফলের চাষাবাদ হয়। উৎপাদন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পাশেই অবস্থিত বিলগুলোতে বর্ষাকালে জমিতে যখন কোন ফসল হয় না তখন সেসব জমিতে পানি ফলের চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা। অসময়ে যখন তাদের হাতে কোন অর্থ কড়ি থাকে না, তখন এই পানি ফল বিক্রি করে কৃষকেরা দৈনন্দিন সংসার চালাতে সক্ষম হচ্ছেন। এবার উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়াই কৃষকেরা খুশি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার পানিফল চাষী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৫ বছর থেকে আমি এই পানি ফল চাষ করে আসছি। এ বছর উৎপাদন ভালো হওয়ার সাথে সাথে ভালো দাম পাচ্ছি। অভাবের সময়ে এই টাকা আমাদের অনেক উপকারে আসছে।
পুরানো পানিফল চাষী আলতাব হোসেন বলেন, আমি একজন বড় পানি ফল চাষী, দীর্ঘ ৪০ বছর থেকে এই ফল উৎপাদন করে আসছি। প্রতি বছরের মতো এবারেও ১৫ বিঘা মাটিতে পানিফল চাষ করেছি। প্রতি বিঘা উৎপাদন খরচ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করা যায়। খরচের তুলনায় লাভের পরিমাণ বেশি। পতিত জমিতে যখন কোন ফসল হয় না, মাছের চাষও করা সম্ভব হয় না সেসব জমিতে পানি ফলের চাষ করা হয়। এই ফলের চাষ করে সেই টাকা দিয়ে সারা বছর সংসার চালান বলে জানান তিনি।
পৌরসভার ঢালবাড়ীর বাসিন্দা পানিফল চাষী সহির উদ্দিন বিশু বলেন, ভাদ্র আশ্বিন মাসে এসব জমিতে কস্তুরী জমে থাকে, পানিফল চাষ করলে আর কস্তুরী জমে থাকে না। পরে ইরিধান রোপণ করা সুবিধা হয়। তাছাড়া এ সময় শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ থাকে না তারাও এই কাজে শ্রম দিয়ে দৈনিক ৫০০/৬০০ টাকা মজুরি পায়। তাদের সংসার ভালো চলে।
পানিফল ব্যবসায়ী নাদু মিয়া জানান, তিনি প্রতিদিন এখান থেকে পানিফল কিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ফল বিক্রি করেন । ৫০ টাকা কেজি পানিফল কিনে সিদ্ধ করে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। ১ হাজার টাকার পানি ফল ক্রয় করে সিদ্ধ করে বিক্রি করলে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। এই ব্যবসা করে ভালো সংসার চলছে বলে জানান তিনি। বর্তমান প্রতি মণ পানিফল/ সিংড়া ফল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কিছুদিন আগে ছিল ২ হাজার টাকা মণ।
নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল কাঁচা এবং সিদ্ধ দু’ভাবেই খাওয়া যায়। তাছাড়া এই ফলের রুটি বানিয়ে খাওয়া যায়, আটা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। এই ফলের আটা শুকিয়ে রেখে বছরের অন্যান্য সময় ব্যবহার করা যায়।
এই ফল ত্বকের জন্য খুব উপকারী, এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কোলেস্টেরল প্রতিরোধে, ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। ওষুধিগুণ বিবেচনা করে এই ফলকে মহৌষধ হিসেবে অবহিত করা যায়।
তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধীরে ধীরে এই ফলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাল বিল জলাশয়ে এই ফলের উৎপাদন হলেও এখন উপজেলার নির্দিষ্ট চার-পাঁচটি বিলেই এই ফলের উৎপাদন হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা এবং ঋণ সহায়তা না থাকায় কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে কৃষকেরা এই ফল চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, এই উপজেলায় এটি একটি ব্যতিক্রমী ফসল। অন্যান্য উপজেলায় এই ফসল উৎপাদন খুব বেশি হয় না। এ বছর এই উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। এটি একটি লাভজনক ফসল। যেসব জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে থাকে ও কোন ফসল উৎপাদন হয় না সেসব জমিতে এই ফসল উৎপাদন হয়। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি এবং আশা করছি আগামীতে এই ফলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
তবে এই ফলের উপর সরকারি সুবিধা দিতে না পারার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন তিনি।